
বান্দরবান: জেলার আলীকদম উপজেলায় প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তার কাজ চলছে। ময়লা আবর্জনাযুক্ত রাস্তায় ও মুষলধারে চলা বৃষ্টির মধ্যেই চলছে তড়িঘড়ি করে সড়ক কার্পেটিং। এছাড়া রাস্তায় নিম্ম মানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বার বার অনিয়ম করেও পার পাচ্ছেন এই ঠিকাদার। এর আগেও এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের সংবাদ আমাদের বাণী’তে প্রকাশিত হলেও কোন ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এহেন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আলীকদমে সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম
গত শনিবার (২১ মে) প্রচন্ড বৃষ্টির পানিতে ও কাদাঁমাটিতে ঠিকাদার আবু বক্করের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা সড়কের কার্পেটিং করছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি হয় এবং কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয়রা।
রবিবার (২২ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ওয়াইহ্লা কারবারী পাড়ায় নির্মাধীন সড়কে মাটিযুক্ত ও অপরিষ্কার, গাছের পাতা, ডালপালা রাস্তায় পড়ে আছে তার উপর রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজ করছেন ঠিকাদারের শ্রমিকরা।
নিম্মমানের বিটুমিন, ময়লাযুক্ত বুজুরি ও অপরিষ্কার পাথরের সংমিশ্রণে রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। পাশে উপজেলা এলজিইডির অফিস সহায়ক দাঁড়িয়ে থাকলেও কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুনঃ আলীকদমের উন্নয়ন প্রকল্প গিলে খাচ্ছে আ’লীগ-বিএনপির ঠিকাদারি সিন্ডিকেট
আলীকদম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের অধীনে ৬ কোটি ১৮ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকায় ৫ প্যাকেজে সড়ক উন্ননের নামে কার্পেটিং কাজটি দেওয়া হলেও মূল কার্পেটিং কাজটি করছেন ঠিকাদার আবু বক্কর।
স্থানীয়রা বলেন, আবু বক্কর যেসব কাজ করেছেন সবই নিম্মমানের ও সব রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। তবুও বার বার তাকে কাজ দিচ্ছেন এলজিইডির কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে। কাজের মান ও স্থায়ীত্ব কতটুকু তা সময় বলে দেবে। সরকারের টেকসই উন্নয়ন, এমন ঠিকাদারের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দেন ঠিকাদার।
আরও পড়ুনঃ আলীকদমে ৬ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে শুরুতেই পুকুরচুরি
স্থানীয় ওচাইমং মার্মা ও মচিং মার্মা বলেন, রাস্তা কার্পেটিং করার আগে বিটুমিন ব্যবহারের কথা থাকলেও তা ব্যবহার করছেন নামমাত্র। শনিবার বৃষ্টির পানি ও কাদাঁমাটি পানির উপর দিয়ে কার্পেটিং করছিল ঠিকাদারের লোকজন। বৃষ্টিতে কাজ না করতে নিষেধ করলে ঠিকাদার আমাদের হুমকি দেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) লোকজনের উপস্থিতিতে ঠিকাদার নিজের মর্জিমত কাজ করেন।
ঠিকাদার আবু বক্কর বলেন, সকালে বৃষ্টি না থাকায় কার্পেটিং কাজ চলেছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কার্পেটিংয়ের মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে তাই শ্রমিকরা রাস্তায় ব্যবহার করেছেন। ময়লা ও কাদাঁপানিতে কিভাবে কার্পেটিং করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, হালকা ময়লা থাকবে বর্ষার দিনে। কাজ করার সময় অফিসের লোকজন থাকে তারা কেন বাধা দিচ্ছেন না।
উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, বৃষ্টিতে যতটুকু কার্পেটিং করেছে ঠিকাদার,পরিদর্শনে গিয়ে সবটুকু তুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কার্পেটিং করার সময় রাস্তায় কোন ময়লা থাকতে পারবে না। বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ রাখার জন্য প্রতি বছর এলজিইডি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চিঠি দিলেও এখনও পর্যন্ত কোন চিঠি পাননি বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ।তিনি আরও বলেন, সড়কের কাজ শতভাগ মান সম্মত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে
উল্লেখ্য, ঠিকাদার আবু বক্করের বিরুদ্ধে এর আগে আমাদের বাণী’তে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক শিরোনাম হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি আলীকদম স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর। রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণে যত অনিয়মই হোক না কেন বার বার এই ঠিকাদারকেই কাজ দেয়ার কারণ কর্তাদের পকেটেও রাস্তা নির্মাণ কাজের একটি বড় অংকের টাকা ভাগ যাচ্ছে।
আমাদের বাণী/২৩/৫/২০২২/এসি
Leave a Reply