আলীকদমে সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রাস্তা নির্মাণ কাজে খোয়ার পরিবর্তে মাটি, ধুলো-ময়লা ও পুরনো রাবিশ ব্যবহার করা হচ্ছে, খোয়া আছে শুধু নামে মাত্র যা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া পুরনো ইট, ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি মিশ্রিত বালু। যেনতেনভাবে রাস্তা নির্মাণে গুণগত মান এতটাই খারাপ করা হচ্ছে যে এটা দেখতে মাটি ও আবর্জনার কাজ মনে হচ্ছে।

আলীকদম উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে আলীকদম উপজেলা গ্রামীণ রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নয়াপাড়া ইউনিয়নে নয়াপাড়া রাস্তার থেকে মংব্রাচিং মার্মা পাড়া হয়ে শৈলকুটি দিয়া নয়াপাড়া বাজার, নয়াপাড়া বাজার থেকে নজির মেম্বারের বাড়ি হয়ে বাগান পাড়া দিয়া কাশেম মেম্বারের বাড়ি, নয়াপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে জাহাঙ্গীর মেম্বারের বাড়ি হয়ে মনু মেম্বারের বাড়ি দিয়া আব্বাস কারবারী পাড়া পুকুর ও রোয়াম্ভু বিজ্র থেকে আবু বক্করের বাড়ি হয়ে মংচপাড়া পার মাতামুহুরী নদী এবং বাবুপাড়া বাজার থেকে বাবুপাড়া কমিউনিটি সেন্টার হয়ে আবু মং কারবারী বাড়ি পর্যন্ত ৬ কোটি টাকা মূল্যে রাস্তা নির্মাণের কাজ পান উটুমং এন্টারপ্রাইজ যার ঠিকাদার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক আবু বক্কর।

সরেজমিনে নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাবুপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাবুপাড়া বাজার থেকে বাবুপাড়া কমিউনিটি সেন্টার হয়ে আবু মং কারবারী বাড়ি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজে খোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরনো রাবিশ, রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া ইটের টুকরো, মাটি এবং ময়লা-আবর্জনা। তড়িঘড়ি করে যেনতেনভাবে খোঁড়া রাস্তা ভরাট করে রুলিং করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করা হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে কাদামাটি দিয়ে তার উপর রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া পুরানো ইটের খোয়া ছিটিয়ে এবং খোয়ার পরিবর্তে মাটি, ধুলো-ময়লা ও পুরনো রাবিশ ব্যবহার হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি মিশ্রিত বালু। এমনকি ইটে পা দিয়ে চাপ দিলে তা ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তার কাজে স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাউকে এসে তদারকি করতে দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বায়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তি বলেন, যে কাজ করা হচ্ছে তা এই রাস্তা এক মাসও ঠিকবা না। বর্ষার মৌসুম শেষ না হতেও আগে যে রাস্তা ছিল তার চেয়েও চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাবে। এই অনিয়ম দেখার কেউ নেই।

এ বিষয়ে নয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, এই কাজের ঠিকাদার ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক হলে কি হবে। তলে তলে সবাই সমান। এই বিপুল অংকের টাকার সড়ক নির্মাণে অনিময়মে যাতে কেউ বাধা হয়ে না দাড়ায় তার জন্য নেতাদের মেনেজ করেই তিনি এই পুকুর চুরী করছেন। সড়ক নির্মাণের কাজ দেখলেই মনে হবে ভালো সড়ক টাকে কেটে কুটে ভাগাড়ে পরিণত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. আবু বক্করের বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে গত দুই দিন যাবত ফোন করা এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা বলেন, আসলে অনেক কাজে ব্যস্ত থাকি সব সময় এই কাজের খেয়াল রাখা হয়না। তাছাড়া এই কাজ এলজিইডির। এলাকাবাসী আমাদের কাছে প্রায়শই অভিযোগ করে বলেন যে নিন্মমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে বালি দরকার সেখানে মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। পুরনো খোয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়ম হচ্ছে তবে আমি ঠিকাদারকে ডেকে বলেছি কাজটি ভালোভাবে করতে এবনং এলজিইডিকেও জানিয়েছি যাতে তারা ভালোভাবে দেখভাল করেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.