গাজীপুরের বায়তুল আমান জামে মসজিদের মতোয়াল্লীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডের ভুরুলিয়ার (মধ্যপাড়া) বায়তুল আমান জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটি নিয়ে শুরু হওয়া ক্ষমতার রাজনীতির যেন শেষ নেই। একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হলেও মসজিদের মতোয়াল্লীর বিরুদ্ধে কোন ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।   মসজিদ কমিটির অব্যাহতি নেওয়া সভাপতি ও মসজিদটির মতোয়াল্লী আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিন যেন এখানে একাই একশো। আর্থিক অনিয়ম, মসজিদের মুসল্লীদের হুমকি ধামকি প্রদান, মসজিদের জমিতে গর্ত করে পাশের দোকানের ব্যঘাত ঘটানোসহ  এহেন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করছেন না।

পাঁচ বছর মেয়াদী মসজিদ কমিটির দুই বছর পার হতেই মসজিদটির সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিতে  নিজের বয়স্ক জনিত কারণ দেখিয়ে মোঃ হাফিজ উদ্দিন সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি নিয়ে পুরো কমিটিকে বাদ দিয়ে মতোয়াল্লী হিসেবে একক ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে তা এখনও অবৈধভাবে বলবৎ রেখেছেন তিনি।

মসজিদের জমির অংশ বিক্রি করে অন্যের কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা, অন্যের জমি দখল, সৎ মায়ের জমি দখলসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে হাফিজ উদ্দিন এর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন অনেকেই যার কপি আমাদের বাণীর হাতে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১১ সালে মসজিদের মতোয়াল্লী ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও বর্তমান অবৈধ পন্থায় সভাপতি হওয়া আব্দুল মালেক আকন্দ (তৎকালীন সভাপতি)   ওয়াকফ স্টেটভুক্ত সম্পত্তি মসজিদের জমির এক অংশ ১১ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন। মাত্র ১১ হাজার টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।  যেখানে ওয়াকফ স্টেটভুক্ত সম্পত্তি বিক্রি কেন কোনভাবেই হস্তান্তর করার সুযোগ নেই, করলে তা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে।

আরও পড়ুনঃ কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জসিমের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিনকে সভাপতি ও আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে মসজিদের সকল মুসল্লিদের উপস্থিতিতে এবং সর্বসম্মতিক্রমে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। যার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছরের। তবে সেই কমিটি মাত্র দুই বছর অতিক্রম করলে জোর জবরদস্থি করে এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য কমিটির লোকজনকে শারীরিক হেনস্থা ও মুসল্লীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে মৌখিক ভাবে আব্দুল মালেককে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন করে কমিটি গঠন করে। নতুন এই অবৈধ কমিটির উপদেষ্টা হয়েছেন আবার স্থানীয় কাউন্সিলর মো: মজিবুর রহমান।  তবে ২০১৯ সালের মসজিদটি পরিচালনা কমিটির রেজুলেশনের সময় এই কাউন্সিলর নিজেও উপস্থিতি ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ গাজীপুরে মসজিদ নিয়েও রাজনীতি, কমিটি রেখেই নতুন কমিটি

ইসলামিম ফাউন্ডেশন তথ্য মতে, যদি কোন মসজিদ পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ময় কিংবা কোন ধরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে সেই কমিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তা ভেঙ্গে দিতে হবে। আর যদি কমিটির একক কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে তার পদটিস শুণ্য ঘোষণা করতে হবে। অথচ বায়তুল আমান জামে মসজিদের মতোয়াল্লী ও সাবেক সভাপতি হাফিজ উদ্দিন এবং নতুন অবৈধ কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেক আকন্দ ছাড়া অন্য কারও বিরুদ্ধে কোন ধরণের অভিযোগ নাই।

উল্লেখ যে মসজিদটি বৈধ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেনের পৈতৃক সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছিল হাফিজ উদ্দিন, প্রশাসনের সহায়তায় সম্প্রতি সেই জমি পুনরদ্ধার করেন আমজাদ হোসেন। সেই থেকে আমজাদ হোসেনের সাথে শত্রুতা শুরু করেন হাফিজ উদ্দিন।

এর আগে এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির বৈধ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিন মোল্লা শারীরিক বয়স্কজনিত কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নতুন করে মৌখিক কমিটি গঠন করেন। যার কোন রেজুলেশন নাই। আমাকে শুত্রতা করে বাদ দিতেই তিনি এই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন। উনি (হাফিজ উদ্দিন) যাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন তিনি এর আগেও মসজিদের সভাপতি ছিলেন তখন তিনি সাধারণ সম্পাদক। তারা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক থাকা কালে মসজিদের জমি বিক্রি করে অন্যের কবর বানিয়েছেন। যেখানে ওয়াকফ স্টেটে স্পস্ট বয়া আছে মসজিদের জায়গাতে মাদ্রাসাও করা যাবে না সেখানে তারা জমি বিক্রি করেছেন। আমাদের পারিবারিক জমি অবৈধ দখল থেকে উচ্ছেদ হবার পর থেকে আমাকে বাদ দিতে এই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদের মতোয়াল্লী ও অব্যাহতি নেয়া সভাপতি হাফিজ উদ্দিন বলেন, মসজিদের সবাই আমাকে চায়। আমার বয়স হয়েছে তাই অব্যহতি নিয়েছে। অব্যহতি নিলে শুধু সভাপতির পদটা খালি হবে পুরো কমিটি ভেঙ্গে দিলেন কেন ? প্রশ্ন করলে তিনি বলে আমি মতোয়াল্লী আমি চাইলে পুরো কমিটি ভেঙ্গে দিতে পারি। মসজিদের জমি বিক্রি বিষয়টি সম্পুন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাও. মোঃ আবু ছালেহ বলেন, মসজিদ কমিটির স্থানীয়ভাবে বসে সবাই করে থাকে। তবে আর্থিক অনিয়ম থাকলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাকে পদ থেকে বাতিল করতে পারে। কোন অনিয়ম না থাকলে একজন মতোয়াল্লী কেন নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কেউ সেই কমিটি বাতিল করার ক্ষমতা রাখে না।

এ বিষয়ে ২৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: মজিবুর রহমান বলেন, এই কমিটিতে আমাকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। কমিটির মেয়াদ শেষ না হতেই কমিটি ভেঙ্গে কেন দেওয়া হলো প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মসজিদের গঠনতন্ত্র দেখেন একজন মতোয়াল্লী চাইলে মসজিদ কমিটি ভেঙ্গে দিতে পারে।

উল্লেখ্য, শুধু আয়মন নেছার জমিই অবৈধ দখল নয় এর আগে হাফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে উপসচিব জসিম উদ্দিন তার(হাফিজ উদ্দিন) আরও দুই চাচাতো বোন মরিয়ম ও রেজিনার জমি অবৈধ ভোগ দখল করে রেখেছিলেন। হাফিজ উদ্দিন তার সৎ মায়ের ৭ শতাংশ জমি এখনো দখলে রেখেছেন যেটা তার বাবা মায়ের নামে দিয়ে গিয়েছিলেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.