
গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডের ভুরুলিয়ার (মধ্যপাড়া) বায়তুল আমান জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি। পাঁচ বছর মেয়াদী মসজিদ পরিচালনা কমিটির মেয়াদ দুই বছর অতিক্রম না করলেও নতুন করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এই রাজনীতির নেপথ্যে রয়েছে মসজিদের সম্পদের ভোগদখল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিনকে সভাপতি ও আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে মসজিদের সকল মুসল্লিদের উপস্থিতিতে এবং সর্বসম্মতিক্রমে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। যার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছরের। তবে সেই কমিটি মাত্র দুই বছর অতিক্রম করলে জোর জবরদস্থি করে এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য কমিটির লোকজনকে শারীরিক হেনস্থা ও মুসল্লীদের ভয়ভীতি দেখি গতকাল ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে মৌখিক ভাবে আব্দুল মালেককে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন করে কমিটি গঠন করে।
জানা গেছে, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিনকে সম্প্রতি বয়স ও শারীরিক অসুস্থ্তাজনিত কারণ দেখিয়ে সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি নেন। গত ০৩ ফেব্রুয়ারি তিনি পুনরায় মসজিদে গিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেন। অব্যাহতি নিলে নতুন সভাপতি পদে কাউকে না বসিয়ে অবৈধ পন্থায় ও জোড় করে কমিটি বাতিল করেন।

ওয়াকফ স্টেট সূত্রে জানা গেছে,মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেন এর মা মোছাঃ আয়মন নেছা (৬৮) তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ভোগ দখলকৃত সম্পত্তির ৮.২০ শতাংশ জমিতে (যার ১.২০ শতাংশ জমি আয়মন নেছা বাবার কবরের জন্য রাখা হয় মসজিদে দান করে বায়তুল আমান জামে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং জমির দানপত্রে মসজিদের মতোয়াল্লী হিসেবে নিয়োগের কথা তার আপন চাচাতো ভাই মসজিদ কমিটির অব্যাহতি নেয়া সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিনকে উল্লেখ করেন।
মসজিদের মতোয়াল্লী ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ২০১১ সালে আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিন এবং তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান অবৈধ সভাপতি আব্দুল মালেক আকন্দ মসজিদের জমির একাংশ ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কবরের জন্য বিক্রি করেন। যার মাত্র ১১ হাজার টাকা মসজিদ কমিটির ফাণ্ডে জমা দেন।। বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন।
কিন্তু সম্প্রতি ২৫ নং ওয়ার্ডের ভুরুলিয়ায় পৈতৃক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ জমি দখলের অভিযোগে আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জসিম উদ্দিন বিরুদ্ধে গাজীপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন আয়মন নেছা।
ছেলে উপসচিব হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে দখল করে রাখার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে এরপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই জমি আয়মন নেছাকে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হন হাফিজ উদ্দিন। আর এরপরই তিনি শুরু করেন মসজিদ নিয়ে রাজনীতি।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির বৈধ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আলহাজ্ব মোঃ হাফিজ উদ্দিন মোল্লা শারীরিক বয়স্কজনিত কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নতুন করে মৌখিক কমিটি গঠন করেন। যার কোন রেজুলেশন নাই। আমাকে শুত্রতা করে বাদ দিতেই তিনি এই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন। উনি (হাফিজ উদ্দিন) যাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন তিনি এর আগেও মসজিদের সভাপতি ছিলেন তখন তিনি সাধারণ সম্পাদক। তারা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক থাকা কালে মসজিদের জমি বিক্রি করে অন্যের কবর বানিয়েছেন। যেখানে ওয়াকফ স্টেটে স্পস্ট বয়া আছে মসজিদের জায়গাতে মাদ্রাসাও করা যাবে না সেখানে তারা জমি বিক্রি করেছেন। আমাদের পারিবারিক জমি অবৈধ দখল থেকে উচ্ছেদ হবার পর থেকে আমাকে বাদ দিতে এই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন।
তিনি আরও বলেন, যদি চলতি কমিটির বিরুদ্ধে কোন অনিময়মের অভিযোগ উঠে তখন আইনের মাধ্যমে তা বিলুপ্তি করে নতুন কমিটি গঠন করা যায়। কিন্তু একক কোন মোতয়াল্লী মসজিদের কমিটি বিলুপ্তী করতে পারেনা। এক্ষেত্রে কোন ধরণের অনিয়মের অভিযোগও নেই।
ওয়াকফ এস্টেটের জমি বিক্রি করে কবরের জায়গা দেয়ার বিধান আছে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ের পরিদর্শক আবুল কাশেম বলেন, ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তি বিক্রি কোন বিধান নেই। এমনকি যিনি জমি দান করেছেন তিনিও চাইলে পারবেন না। এটা আইনগত অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে মসজিদের (মৌখিক ঘোষিত)অবৈধ পন্থায় সভাপতি হওয়া আব্দুল মালেক আকন্দ বলেন, মসজিদের মতোয়াল্লী একক ক্ষমতাবলে কমিটি বিলুপ্তী করে দিয়েছেন। যেহেতু কমিটি ছাড়া একটি মসজিদ চলে না তাই কমিটি করা হয়েছে। আমাকে সভাপতি বানানো হয়েছে।
সভাপতি থাকাকালীন আপনি ও মতোয়াল্লী হাফিজ উদ্দিন মিলে মসজিদের জমির একাংশ ১১ লাখ টাকা বিক্রি করে ১১ হাজার টাকা মসজিদের ফান্ডে দিয়েছেন। ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন? আর বাকি টাকা গেলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
বক্তব্য জানতে চেয়ে অবৈধ এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদের মতোয়াল্লী ও অব্যাহতি নেয়া সভাপতি হাফিজ উদ্দিনের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তার ছোট ছেলে ফোন ধরে বাবা বাইরে আছেন বলে জানান এবং পরবর্তীতে ফোন করতে বলেন। রাতে পুনরায় ফোন করা হলে তিনি বাবাকে ফোন দিচ্ছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি ।
উল্লেখ্য, শুধু আয়মন নেছার জমিই অবৈধ দখল নয় এর আগে হাফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে উপসচিব জসিম উদ্দিন তার(হাফিজ উদ্দিন) আরও দুই চাচাতো বোন মরিয়ম ও রেজিনার জমি অবৈধ ভোগ দখল করে রেখেছিলেন। হাফিজ উদ্দিন তার সৎ মায়ের ৭ শতাংশ জমি এখনো দখলে রেখেছেন যেটা তার বাবা মায়ের নামে দিয়ে গিয়েছিলেন।
Leave a Reply