
রাজধানীর ফার্মগেটে চাঁদা না পেয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকান, লেগুনা ও খাবার হোটেলে ভাঙচুর ও লেগুনা চালক-চালকের সহকারী, চা দোকানী এবং খাবার হোটেলের কর্মচারী ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করা পথচারীদের মারধর করা এবং বেপরোয়া আচরণের অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন ঢালীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি।
বুধবার বিষয়টি আমাদের বাণী’কে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া। তিনি জানান, ঘটনার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত রবিবার (০৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৬টায় ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের টিএনটি মাঠ সংলগ্ন এলাকায় চাঁদা না পেয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকান, লেগুনা ও খাবার হোটেলে ভাঙচুর ও লেগুনা চালক, চা দোকানী এবং খাবার হোটেলের কর্মচারী ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করা পথচারীদের মারধর করার বিষয় নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার “ইন্দিরা রোডে বেপড়োয়া মিথুন ঢালী: চাঁদা না পেয়ে লেগুনা ভাঙচুর-মারধর” শিরোনামে আমাদের বাণী’ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় তৈরি হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। আমাদের বাণী পত্রিকার সংবাদ প্রকাশে পর মিথুন ঢালী যে হোটেলে চাঁদা না পেয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে তার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন।
চাঁদা না পেয়ে যে তাণ্ডব চালায় মিথুন ঢালী
রবিবার (০৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৬টায় ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের টিএনটি মাঠ সংলগ্ন এলাকায় আসেন মিথুন ঢালীসহ তার অনুসারীরা। তারা টিএনটি মাঠ সংলগ্ন চায়ের দোকানে প্রথমে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃত করায় দোকান ভাঙচুর করেন এবং দোকানদারদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন। এরপর পাশেই ইন্দিরা রোডের ঘরোয়া রেস্তোরায় গিয়ে চাঁদা দাবি করেন মিথুন ঢালী। সেখানেও চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভাঙচুর চালান মিথুন ও তার ক্যাডার বাহিনী। রেস্তোরায় কর্মচারীদের মারধর করা হয়। যার সিসিটিভি ফুটেজ একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়েছে। ঘরোয়া রেস্তোরায় ভাঙচুর চালিয়ে এবং রেস্তোরা বন্ধ করে পাশে থাকা বিকাশে দোকানে চাঁদা না পেয়ে ৩য় দফায় হামলা চালান এই গ্রুপ। সেখান থেকে ইন্দিরা রোডের খামারবাড়ি/খেজুর বাগান লেগুনা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্দিরা পরিবহনসহ অন্যান্য লেগুনায় চাঁদা দাবি করেন। লেগুনা আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে লেগুনা যেতে না দেওয়ায় লেগুনার যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এরপর প্রায় ৩৫ টা লেগুনা ভাঙচুর করে লেগুনা চালক ও সহকারীদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। চা দোকানীরা, হোটেল কর্মচারী, লেগুনার চালক ও কর্মচারীরা এবং পথচারী ও লেগুনার যাত্রীরা যৌথভাবে প্রতিবাদ জানালে তাদের উপর মারতে উদ্ধত হলে সবাই মিলে মিথুন ঢালী এবং তার অনুসারীদের গণধোলাই দেওয়া হয়।
নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করে চাঁদাবাজির ঘটনা চাপা দিয়ে রাজনৈতিক ইস্যুর চেষ্টা মিথুন ঢালীর
উপস্থিত জনতার হাতে গণধোলাইয়ের পর নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত প্রাইভেট কার (যার নম্বর- ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৭২৮) অনুসারীদের ভাঙচুর করান মিথুন ঢালী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে ইস্যু তৈরির চেষ্টা করেন। তবে উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী-লেগুনা চালক-কর্মচারী ও দোকানদাররা অনুসারীদের দিয়ে গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি আমাদের বাণী’র কাছে স্বীকার করেছে।
ছাত্রলীগে থাকা অবস্থাতেই বেপরোয়া মিথুন ঢালী
২০১৪ সালে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বপান মিথুন। এরপরই চাঁদাবাজীতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন ইন্দিরা রোডে। একাধিকবার তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন দোকানদারদের মারধর করেছেন তিনি। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় বাড়ি মিথুন ঢালীর। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার গঙ্গানগর বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করে আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতাকর্মীকে গুলিবিদ্ধ করেন মিথুন ঢালী। তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে তখনও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তখন গণমাধ্যমে তোলপাড় তৈরি হয়। এছাড়াও ২০১৬ সালে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা ও মিথুন ঢালীর অনুসারীর বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠে। আর হত্যায় মিথুন ঢালীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহত আফসানা ফেরদৌসীর পরিবার। তবে সে যাত্রায়ও পার পেয়ে যান ঢালী।
বর্তমানে থম থমে পরিস্থিতি ইন্দিরা রোডে
বুধবার ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে সরেজমিনে দেখা যায় গত রবিবার থেকে আজ পর্যন্ত কোন লেগুনা ছেড়ে যায়নি এবং কোন লেগুনা আসেনি ফার্মগেটে। অনেক চায়ের দোকানও খোলেনি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টা মোটরসাইকেল করে ইন্দিরা রোডে শোডাউন দিচ্ছে মিথুন ঢালীর ক্যাডার বাহিনী। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
চা দোকানী, লেগুনা চালক ও সহকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত চার দিনে কোন লেগুনা চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবার নিয়ে তারা অসহায় জীবনযাপন করছেন। প্রতিদিন ১০-১২ টা মোটরসাইকেল করে মিথুন ঢালীর লোকজন শোডাউন দিচ্ছেন। কখন আবার হামলা করে বসেন সেই আতঙ্কে আছেন।
রানা নামের এক লেগুনা চালক বলেন, চার দিন ধরে আমাদের কাজ বন্ধ। কি খাব সন্তানদের কি খাওয়াবো বুঝে উঠতে পারছিনা। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
যা বলছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম আমাদের বাণী’কে বলেন, মিথুন ঢালীর গাড়ি কারা ভাঙচুর করলো এ বিষয়টিও যেমন দেখতে হচ্ছে তেমনি মিথুন ঢালী সেখানে কোন অপরাধ করলো কিনা সে বিষয়টিও দেখছে কেন্দ্র। যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ না হচ্ছে। কিছু বলা যাচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া আমাদের বাণী’কে জানান, অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না সে যেই হোক। মিথুন ঢালীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি করেছি কাজ করছে। প্রতিবেদনে যদি তার অন্যায় উঠে আসে তাহলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সে যত বড়ই শক্তিশালী হোক।
একাধিকবার অপকর্মে লিপ্ত হয়েও কিভাবে সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজি মেসবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় এক সহ সভাপতি আমাদের বাণী’কে বলেছেন, আমাদের বাণী পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ভাঙচুরের ফুটেজ প্রকাশের পর বিষয়টি বিব্রত স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply