
রাজধানীর ফার্মগেটে চাঁদা না পেয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকান, লেগুনা ও খাবার হোটেলে ভাঙচুর ও লেগুনা চালক, চা দোকানী এবং খাবার হোটেলের কর্মচারীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
গত রবিবার (০৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৬টায় ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের টিএনটি মাঠ সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনাঘটে। ভাঙচুর চালানো ঐ নেতা হচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন ঢালী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী টুটুল এবং আরও অন্তত ২০-২৫ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা এই প্রতিবেদককে জানান, রবিবার ৬টার দিকে মিথুন ঢালীর নেতৃত্বে কয়েকজন এসে প্রথমে চায়ের দোকানগুলোতে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় দোকান ভাঙচুর এবং দোকানীকে মারধর করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী খাবার হোটেলে চাঁদা দাবি করে এবং না পেয়ে হোটেল কর্মচারীদের মারধর করে হোটেল বন্ধ করে ইন্দ্রিরা রোডের দিকে চলে যান।
জানা গেছে, ইন্দিরা রোডের খামারবাড়ি/খেজুর বাগান লেগুনা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্দ্রিরা পরিবহন ও আর কয়েকজন মালিকের লেগুনায় চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে মিথুন ঢালীর নেতৃত্বে অন্তত ৩৫ টা লেগুনা ভাঙচুর করা হয়। চাঁদা না দিলে এবং লেগুনা ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানালে লেগুনার চালক ও সহকারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। লেগুনায় যাত্রী এবং পথচারীরা ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তাদেরকেও মারধর করেন মিথুন ঢালী। এর কিছু সময়ের মধ্যে মারধরের শিকার চা দোকানী, হোটেল কর্মচারী, লেগুনা চালক ও সহকারীরা এবং যাত্রীরা মিলে সংঘবন্ধ হয়ে মিথুন ঢালিকে ঘরোয়া হোটেলের সামনের ময়লার ডাস্টবিনের পাশের রাস্তায় গণধোলাই দেন। পরে নিজেই নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত গাড়ি তার অনুসারীদের দিয়ে ভাঙচুর করে তা রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চান। তার ব্যবহৃত গাড়ি নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৭২৮।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা দোকনাদার বলেন, মিথুন ঢালী এবং তার সহযোগীরা প্রায়ই চাঁদা দাবি করেন এবং মারধর করেন। এটি এই প্রথম ঘটনা না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই এবং আমাদের দোকান ভাংচুর করায় তা মেরামতের জন্য ক্ষতিপূরণ চাই।
এক লেগুনা চালক বলেন, লেগুনায় চাঁদা দাবি করে না পেয়ে মিথুন ঢালী আমাদের উপর বর্বর হামলা চালিয়ে অন্তত ৩৫ টা লেগুনা ভাঙচুর করেছে। এই চাঁদাবাজের হাত থেকে আমরা রক্ষা চাই। এই আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আব্দুর রহিম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ফুটপাতে ব্যবসা এবং সেখান থেকে চাঁদাবাজী করা এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। সরকারের উপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের হাত থেকে ইন্দ্রিরা রোডের মানুষগুলোকে বাঁচান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লেগুনার মালিক বলেন, “আমরা তাদের আতঙ্কে রাস্তায় গাড়ি বের করতে পারতেছি না। রাস্তায় গাড়ি বের করলেই গাড়ি ভাঙতেছে এবং জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, ড্রাইভার হেলপারদের মারধর করতেছে”।
তিনি আরো বলেন, আমরা গরীব মানুষ গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা ইন্দিরা পরিবহনের মালিক মোঃ দেলোয়ার হোসেন চুন্নু মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন ঢালীর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের মুঠোফোনে কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আহাদ মুঠোফোনে বলেন, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা এবং বিক্ষিপ্ত হাতাহাতির ঘটনা শুনেছি, কিন্তু কেউ কোন অভিযোগ দায়ের না করায় আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।
উল্লেখ্য, মিথুন ঢালী এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সময়েও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাওয়ায় তিনি এখন আরও বেপড়োয়া হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply