‘আসানি’র আশঙ্কা: আগাম আম পেড়ে ফেলছেন চাষিরা

সাতক্ষীরাঃ ঘূর্ণিঝড়ের আসানি’র শঙ্কায় নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাড়তে শুরু করেছেন তালা উপজেলাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষিরা। বৃহস্পতিবার (৫ মে) থেকে বাজারে গোবিন্দভোগ জাতের আম বিক্রি শুরু হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে অপুষ্ট হিমসাগর আম বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সোমবারের টানা বৃষ্টিতে আম পাড়ার হিড়িক পড়ে গেছে।

এদিকে সরকারি নির্দেশনায় জেলায় আম ভাঙার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বায়, ক্ষীরশাপাতি, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ অন্যান্য আগাম স্থানীয় জাতের আম, ১৬ মে থেকে হিমসাগর, ২৪ মে থেকে ল্যাংড়া ও পহেলা জুন থেকে আম্রোপালি আম ভেঙে বাজারে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় আসানির সম্ভাবনা থাকায় এবার সরকারি নির্দেশনা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার আমচাষি রয়েছেন।

এরমধ্যে তালা উপজেলা ৭১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে এবং ১৩ শতাধিক আমবাগান রয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

তালার কলিয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী মোড়ল আজিজুর রহমান শহরের বড় বাজারে আমের আড়তে ১০ মণ আম বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি জানান, ঝড় আসার খবরে গাছ থেকে গোবিন্দভোগ আম সব ভেঙে নিয়ে এসেছেন।

ঝড়ের আতঙ্কে একইভাবে তালার উথালী গ্রামের আম ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনও আম ভেঙেছেন। বড় বাজারে কম মূল্যে আম বিক্রি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঝড় আতঙ্কে গাছ থেকে আম পেড়ে ফেলেছি। দুই বছর করোনায় ক্ষতি হলো, তারপর গেল বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে হয়েছে। এ বছর ঘূর্ণিঝড় আসানি আতঙ্কে রয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমের ফলনও ভাল হয়নি বলে জানান তিনি।’

সাতক্ষীরা জেলা আমচাষি সমিতির সভাপতি লিয়াকাত হোসেন বলেন, ‘করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত কয়েক বছর চাষিরা আমচাষে লোকসানে আছেন। চলতি মৌসুমে ফলন কিছুটা কম। এবার চাষিরা আশা করেছিলেন ভালো দামে আম বিক্রি হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আম পাড়ার জন্য আমাদের চাষিদের বলা হয়েছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহে একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এই শঙ্কায় অনেকে গাছ থেকে আগাম আম পাড়তে শুরু করেছেন।’ তবে এসব আম কাঁচা বিক্রি করা হবে বলেও জানান তিনি।

সুলতানপুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় বৃহস্পতিবার থেকে গোবিন্দভোগ আম ভাঙা শুরু হয়েছে। বড় বাজারের প্রতিটি আমের আড়তে শুধুমাত্র গোপালভোগ, গোবিন্দভোগসহ আগাম জাতের আম বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথমদিন প্রতিমণ কাঁচাআম বিক্রি হয়েছে ২০০০ থেকে ২৮০০ টাকায়।’ অন্য জাতের আম পাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকে গোপনে বাগান থেকেই হিমসাগর আম পেড়ে বিক্রি করছেন। ওই আম ১৬ তারিখের আগে বড় বাজারে বিক্রি হবে না।’

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, ‘সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক গাছেই ফলন হয়নি। যেসব গাছে আম হয়েছে সেগুলোও আকারে ছোট। ঘূর্ণিঝড় আসানির আশঙ্কায় অনেক চাষিরা আগাম পেড়ে নিচ্ছেন।’

সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার জেলায় আমের ফলন কিছুটা কম। চলতি সপ্তাহে একটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা শোনা যাচ্ছে, এজন্য চাষিদের আগাম জাতের আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে অপুষ্ট হিমসাগর আমও পাড়ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিদেশে আম রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আম রপ্তানির জন্য এবারো আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শুধুমাত্র নির্ধারিত বাগানের আম বিদেশে রপ্তানি হবে।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.