পুত্রবধূর পরকীয়ায় গ্রামছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যু

ফেনীর সোনাগাজীতে পুত্রবধূর পরকীয়া প্রেমের প্রতিবাদ করে গ্রামছাড়া হওয়া এক বৃদ্ধ দম্পতি স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুত্রবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার সইতে না পেরে ও হুমকিতে কন্যার বাসায় থাকা দম্পতির এমন মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ।

যে স্বপ্নের বাড়িতে থেকে জীবন-যৌবন কাটিয়েছেন ওরা, সেই স্বপ্নের বাড়িতে একই দিন মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ হয়ে ফিরলেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি।

শনিবার রাত ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তারা।

উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মোবারক আলী মাঝি বাড়ি প্রকাশ মানিক মেম্বার বাড়ির বৃদ্ধ মো. ইদ্রিস মিয়া ও তার স্ত্রী সাজেদা আক্তারের কথা। মো. ইদ্রিস মিয়া চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক তিনি।

সোনালী জীবনে দুই কন্যা ও পুত্র সন্তানের জনক-জননী তারা। পুত্র সন্তানটি বর্তমানে মিশর প্রবাসী। ২০১৫ সালে এক মাত্র পুত্র জাবেদ হোসেন মিশুকে একই বাড়ির আবদুর রাজ্জাকের কন্যা তাছলিমা আক্তারকে বিয়ে করান। তখন মিশু ছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী। বিয়ে হয়েছিল মুঠোফোন।

বছর দুয়েক পূর্বে মিশুক দেশে ফিরে কয়েক মাস দেশে থাকার পর ফের মিশর চলে যান। এদিকে তার স্ত্রী এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া প্রেমে। সম্প্রতি রাতে শাশুড়ি সাজেদা আক্তার তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য ঘুম থেকে উঠলে তাছলিমার পরকীয়া প্রেমিককে পুত্রবধূর শয়ন কক্ষ থেকে বের হতে দেখেন। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ না করলেও বৃদ্ধ স্বামীকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেন।

সকালে স্বামী-স্ত্রী বিষয়টি পুত্রবধূর পিতা আবদুর রাজ্জাক ও ভাই আবদুর রউপকে জানালে তারা তাছলিমার বিচার না করে উল্টো তাছলিমার বদনাম করছে মর্মে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজ্জাক ও তার ছেলে মিলে বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর করে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেন। এই অপমান সইতে না পেরে এবং তাদের দেয়া হুমকিতে বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ি ছেড়ে বড় মেয়ে কাজল আক্তারের চট্টগ্রামস্থ ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন।

সেখান থেকে বাড়িতে না ফিরতে মোবাইল ফোনে পুত্রবধূ ও তার ভাইয়ের অব্যাহত হুমকিতে বৃদ্ধ দম্পতি মানসিক যন্ত্রণায় অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে সাজেদা আক্তার (৬০) স্ট্রোক করলে তাৎক্ষণিক তাকে কন্যার বাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক সাজেদার মৃত্যুর সংবাদ নাতনির মোবাইল ফোনে বাসায় থাকা বৃদ্ধ স্বামী ইদ্রিসকে জানানো হয়।

স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ সইতে না পেরে ইদ্রিস মিয়াও (৭০) স্ট্রোক করেন। তাকেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাত ৮টার দিকে পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্সে ইদ্রিস দম্পতির লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। দুই কন্যাসহ স্বজনদের আহাজারিতে আকাশপাতাল ভারি হলেও পুত্রবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের ছিল না কোনো শোকের অনুভূতি।

বৃদ্ধ দম্পতির কন্যা কাজল আক্তার ও একই বাড়ির বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল হক মানিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে তাছলিমার ভাই আবদুর রউপ বলেন, আমার বোনের শ্বশুর-শাশুড়ি পরকীয়ার বদনাম করেন। এতে আমাদের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। তবে ইদ্রিস দম্পতির লাশ দেখতে বা লাশ দাফনে তাদের কোনো সহযোগিতা না করার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.