সুপারিশ সচিবের, শাস্তির মুখে উপসচিব

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রয়াত আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার জন্য প্রস্তাবে তথ্য গোপন করায় উপসচিব মো. আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধ বিভাগীয় মামলা হচ্ছে। আমির হামজার মেজো ছেলে আছাদুজ্জামান খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

আর আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। প্রস্তাবে তথ্য গোপনের দায়ে উপসচিব আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া নিয়ে দায়ী সবার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সাহিত্যানুরাগী, বর্তমান ও সাবেক আমলারা মত দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এ ঘটনাকে দুর্নীতি হিসাবে অভিহিত করেছেন। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঘটনাটি একটা বড় ধরনের দুর্নীতি। তিনি বলেন, কে কোন পদমর্যাদায় আছেন, সেটা দেখার বিষয় নয়। যারা জড়িত, সবাইকে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যুগান্তরকে বলেন, সচিব ও উপসচিব মিলে প্রস্তাব করলেন আর একজন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে গেলেন-বিষয়টা এত ছোট বলে আমার মনে হয় না। এর পেছনে আরও ঘটনা আছে। এসবও উদ্ঘাটন হওয়া জরুরি। তা না হলে বারবার এমন ঘটনা ঘটবে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি কারণ দর্শানোর সঙ্গে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ চাইলে দুটোই পাবেন। প্রাথমিকভাবে তার দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ের তদন্ত শুরু হবে বলে জানা গেছে।

একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রশাসনে এ রকম অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। কিন্তু দুর্বলের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। একজন সচিব যখন একটি বিষয়ে প্রস্তাব করেন, তখন তিনি দায়িত্ব নিয়েই করেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন তিনি ছাড় পাবেন?

উল্লেখ্য, গত মাসের শেষের দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাণিজ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বাণিজ্য সচিব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপসচিব আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সচিবালয়ের একাধিক সূত্র যুগান্তরকে জানায়, স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো বিষয়ে বারবার অবহেলার কারণে সরকারের নীতিনির্ধারকরা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। দু-একজনের খামখেয়ালির জন্য পুরো আমলাতন্ত্রকে দায় নিতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বশীলতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনার দায় নিরূপণের জন্য উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ ১০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করে স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সাহিত্যে আমির হামজাকে পুরস্কার দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে চারদিনের মাথায় তার নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে সরকার। আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে। ‘বাঘের থাবা’ ও ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ নামে তার দুটি বই রয়েছে। বই দুটি ২০১৮ ও ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়। বাবার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য আছাদুজ্জামান আবেদন করেন। এতে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সুপারিশ করেন। এর আগে ২০২০ সালে একজন অখ্যাত লেখককে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েও তা বাতিল করা হয়। সূত্র; যুগান্তর

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.