
ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম সেতু ও বাঁধের কাছ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে নদের মাটি কেটে ডাম্প ট্রাকে করে যাচ্ছে নানা গন্তব্যে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর পুরোনো গুদারাঘাট থেকে পাটগুদাম সেতু পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ঘেঁষে মাটির স্তূপ কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। রাত-দিন চলা নদের মাটি কাটা বন্ধে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে পাটগুদাম সেতু থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ওপর দিয়ে পুরোনো গুদারাঘাট এলাকায় যাওয়ার সময় চোখে পড়ে বিষয়টি। মাটি সরানোর ছবি তোলার সময় এগিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। নিজেকে পরিচয় দেন ঠিকাদার হিসেবে। তার নাম জানান জোবায়ের জনি। নগরীর কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জনি জানান, থানাঘাট এলাকায় খনন করা বালু রাখার জায়গা তৈরি করতে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এ কাজটি তাকে দিয়ে করাচ্ছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) লোকজন।
মাটি সরাতে কে বলেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে জোবায়ের জনি বলেন, কবীর নামের একজন কর্মকর্তা তাদের মাটি সরিয়ে নেওয়ার কাজটি দিয়েছে। কবীরের একটি মোবাইল ফোন নম্বরও দেন জোবায়ের। তবে সেটি ছিল ভুল নম্বর। বিআইডব্লিউটিএতে খোঁজ নিয়ে কবীর নামের কোনো কর্মকর্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। শুধু জোবায়ের নন, ব্রহ্মপুত্রের মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। গত ১৫ এপ্রিল রাতেও মাটি কাটতে দেখা গেছে। পরদিন বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। তবুও বন্ধ হয়নি মাটি লুট।
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, বিশাল গর্ত করে মাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নদী কমিশন এগুলো দেখার কথা; কিন্তু তাদের জনবল না থাকায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এগুলো দেখা হয়। এখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে কাজগুলো করছে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভাঙন কিংবা ভূমি ধসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এটি বন্ধে আন্দোলন লাগবে।
বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী দিদার এ আলমের দাবি, তারা বাঁধের কাছ থেকে কোনো মাটি সরাচ্ছেন না। তাদের নাম ভাঙানো হচ্ছে। কবীর নামের কোনো কর্মীও নেই। এখান থেকে মাটি কাটার সুযোগ নেই। এটি বন্ধ করতে বলা হয়েছে, যদি বন্ধ না হয়, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, বাঁধের মাটি কিংবা নদীর মাটি কাটা অপরাধ। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সেতুর দুই পাশে ৫০০ মিটার করে এলাকায় মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন সেতুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন,
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a Reply