
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ যাত্রার আগাম ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। রেলওয়ের নির্ধারিত মোট টিকিটের অর্ধেক অনলাইনে এবং অর্ধেক ঢাকার পাঁচ রেলস্টেশনের কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আগাম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন শনিবার ‘সহজ ডটকমে’ টিকিট পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। মাত্র এক ঘণ্টায় অনলাইনে টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় রেলস্টেশনে নামে সাধারণ মানুষের ঢল।
টিকিটপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, সার্ভার জটিলতার কারণে সকাল থেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছিলেন না যাত্রীরা। কারণ টিকিট বিক্রির নতুন দায়িত্ব পাওয়া সহজ ডট কমের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা টিকিট সংগ্রহ করতে রেলস্টেশনে আসেন। কিন্তু এখানেও টিকিট পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
এবার কালোবাজারি ঠেকাতে ঈদুল ফিতরের ট্রেনের টিকিটি সংগ্রহ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়। আর বিদেশিদের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফটোকপি।
কমলাপুর রেলস্টেশন গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারের সামনে র্দীঘ লাইন। টিকিট প্রত্যাশীরা কাউন্টারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে লাইনে অবস্থান নেন। তাদের বেশিরভাগেরই ভাষ্য, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন কী পারবেন না সেই অনিশ্চয়তা থেকে তারা কাউন্টারে এসেছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, সকাল ৮টা থেকে সহজ ডটকমের ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশী তোফায়েল খন্দকার বলেন, সহজ নাকি মানুষের চলাফেরা সহজ করে দেবে। এখন দেখি কঠিন করে দিয়েছে। তাদের ওয়েব সাইটেই প্রবেশ করা যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষের লজ্জা পাওয়া উচিত। যদিও তাদের লাজ লজ্জা নেই। ঈদের সময় মানুষ বাড়ি গিয়ে আনন্দ করবে। কিন্তু টিকিটি কাটতে গিয়েই তো অসুস্থ হয়ে যাবে। কমলাপুর রেলস্টেশনে যে ভিড় লেগেছে মানুষের। তাতে টিকিটি পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।
লাইনে দাঁড়ানো ফাইজা রহমান বলেন, অসুস্থ মা ও দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে শশুরবাড়ি যাবো ঈদের ছুটি কাটাতে। অনলাইনে ঢুকতে না পেরে আমি কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছি। লালমনিরহাটের টিকিট কাটতে। কিন্তু কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে তো মানুষের ভিড় দেখে কষ্ট লাগছে। অন্য দেশে সবকিছু কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। আমি বিভিন্ন দেশ ঘুরেছি, আমাদের দেশের মতো দুর্ভোগ আর কোনো দেশে পোহাতে হয় না।
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল এবং খুলনাগামী আন্তঃনগর এবং স্পেশাল ট্রেনের টিকিট। বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেন, তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেন, ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেওয়া হচ্ছে মোহনগঞ্জগামী আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ ও হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। এছাড়া ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেল স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট।
আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটি পাচ্ছি না। প্রথম দিনেই এরকম বিড়ম্বনায় পড়তে হবে চিন্তাও করিনি।
ওহিদুর রহমান ওহি বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে যদি কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। রেলস্টেশনের ম্যানেজার ও মাস্টারকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এরকম হলে চলবে না।
জানতে চাইলে বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা শফিকুর রহমান জানান, ঈদযাত্রার আগাম ট্রেনের টিকিট পেতে যেন যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরজন্য অতিরিক্ত কাউন্টার খোলা হয়েছে। নারীদের জন্য ২টি আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে। অনলাইনে ৫০ শতাংশ এবং কাউন্টারে ৫০ শতাংশ পাওয়া যাবে। তবে টার্গেট রয়েছে আন্তঃনগর ট্রেনের ২৭ হাজার আর এক্সট্রা কোচসহ বিশেষ ট্রেনের মিলিয়ে মোট ৩৫ হাজার টিকিট বিক্রি করা।
Leave a Reply