ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা: ৩ বছরে আবেদন ফি বেড়ে তিন গুণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি এবারও বেড়েছে। সম্প্রতি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে টানা তিন বছর ধরে ফি বাড়ানো হয়েছে ৬৫০ টাকা। ফলে এ সময়ে ফি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীপ্রতি খরচ পড়ে ১৩০০ টাকার বেশি। গত বছরের ফিতে খরচ ওঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। সে কারণে ফি বাড়ানো হয়েছে।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি ছিল ৩৫০ টাকা। এরপর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১০০ টাকা এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানো হয়। এবার বাড়নো হলো ৩৫০ টাকা। এবারের ফি ১০০০ টাকার মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ৯৫৬ টাকা ৫০ পয়সা, অনলাইন সার্ভিস চার্জ ৩০ টাকা ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ ১৩ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বেশ কয়েকজন ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবক বলেছেন, বছর বছর ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের ফি বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত নয়। এখানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। তাদের কাছে এক হাজার টাকাও অনেক বেশি। ঢাবি ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তুলতেও তাদের অনেক খরচ হয়। ফির কারণে অনেকেই ফরম তোলা থেকে বিরত থাকে।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ায় অতিরিক্ত খরচের কথা বলা হয়। এবার কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি কমানোর কথা বলছে।

ভর্তি আবেদনের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। ভর্তি কমিটির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সমাবেশ বিবৃতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বিবেচনা করে ভর্তি আবেদনের ফি নির্ধারণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করে দেখতে পারে।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষার্থীর অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ভর্তি ফরম বিনামূল্যে বিতরণ করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বছর বছর ভর্তি ফি বাড়িয়ে এক ধরনের ভর্তি বাণিজ্য করছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা এক বিবৃতিতে বলেছেন, বছর বছর ভর্তির আবেদন ফি বৃদ্ধি করে শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, যা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগকে দিন দিন সংকুচিত করছে।

ভর্তি পরীক্ষার ফি কমানোর দাবিতে গত ১২ এপ্রিল ঢাবি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় ছাত্রদল। স্বারকলিপিতে বলা হয়, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে অসংখ্য শিক্ষার্থীর অভিভাবক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাছড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। স্মারকলিপিতে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সুগম করার স্বার্থে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর দাবি জানানো হয়।

এ বিষয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিভাগীয় শহরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় আমাদের ব্যয় অনেক বেশি। এবার যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়েও খরচ বেশি হতে পারে।

উপাচার্য বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে ডিনরা বলেছেন, এই ফি ১২০০ বা ১৩০০ টাকা হলে যথাযথ হয়। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা বলেছি, এটি কোনোভাবেই এক হাজার টাকার ওপরে নেওয়া যায় না। ভর্তুকি যাতে না দিতে হয়, সে জন্য হয়তো শিক্ষকরা ত্যাগ স্বীকার করবেন। শিক্ষকদের অনেক কাজই বিনা পয়সায় করতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুনাফা করার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.