ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত দুগ্ধ খামারিরা

দুধ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার না থাকায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নওগাঁ জেলার রাণীনগরের খামারিরা। এমনকি দুগ্ধজাত গরু পালন ছেড়ে দিয়েছে এ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খামারি। উদ্যোক্তা ধরে রাখতে স্থানীয়ভাবে নির্দিষ্ট দুধের বাজার গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন দুধ উৎপাদনকারী খামার মালিকরা।

উপজেলার পারইল গ্রামের গ্রিন ভিউ ডেইরি ফার্মের মালিক আবু সুফিয়ান জানান, তার ৪টি গরু থেকে প্রতিদিনই ৫০লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রতি লিটার দুধ ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা লিটার বিক্রি করতে হয়।

মালশন গ্রামের আমিন হাসান এগ্রো লিমিটেডের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, তার খামারে প্রায় ৪০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুধ উৎপাদনে গরু রয়েছে ৭টি। দুধের বাজার ভালো না থাকায় ৪০ টাকা লিটার দরে স্থানীয় ঘোষের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় দুধ বিক্রিতে স্থানীয় ভাবে বাজার গড়ে তোলা, দুধের মজুদসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধার কথা গত দুই বছর ধরে শুনে আসছি কিন্তু এর কোন বাস্তবায়ন দেখছিনা।

লোকসানের কবলে পড়ে দুধ উৎপাদন ছেড়ে দেওয়া ঘোষগ্রামের রাবেয়া ডেইরি এ্যান্ড ক্যাটল ফার্মের মালিক জাবেদ ইকবাল জানান, তার ফার্মে ১৬টি গরু ছিল। প্রতিদিনের উৎপাদিত দুধ শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করতে হতো। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে গত দেড় মাস আগে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। আবহাওয়া জনিত কারণে অথবা অন্য কোন কারণে শ্রমিক না আসলে দুধ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়তে হত। তার গ্রামের আরো দুইজন খামারি একই সমস্যার কারণে খামার ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

খামারিদের মতে, সরকার পর্যায় থেকে দুধের দর নির্ধারণ করে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করলে রাণীনগর উপজেলার শত শত শিক্ষিত বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের জায়গা করে নিতে পারবে। বর্তমান গো-খাদ্যের লাগামহীন বাজার দর অনুযায়ী দুধ বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই দুধ বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট বাজার গড়ে ওঠলে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন কোম্পানী এবং দই-মিষ্টি তৈরিতে পাইকাররা এসে দুধ ক্রয় করতে পারবে। এতে ন্যায্য মূল্যও নিশ্চিত হবে।

রাণীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় নিজ নিজ প্রচেষ্টায় মোট ১৭৫টি দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছিলেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক খামার ছেড়ে দিয়েছেন খামারিরা। বর্তমানে ১২০টি খামারে দুধ উৎপাদন হচ্ছে । তবে এসব খামার থেকে প্রতিদিন কি পরিমান দুধ উৎপাদন হয় সে ব্যাপারে তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা।

এব্যাপারে লাইভ স্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) রাণীনগর উপজেলা লাইভ স্টক এক্সটেনশন কর্মকর্তা (এলইও) শরিফ উদ্দীন মন্ডল বলেন, প্রকল্পের আওতায় জরুরী কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত রমজান মাসে দেড় মাসের মতো সময় ধরে খামারিদের নিকট থেকে দুধ, ডিম, মাংস ক্রয় করে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে দুধের বাজার গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিষয়টি জানা নেই।

রাণীনগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা কামরুন্নাহার আকতার বলেন, দুধ বিক্রিতে নির্দিষ্ট বাজার না থাকায় খামারিদের চরম ভোগান্তি ও খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি, দেশের অন্যান্য উপজেলায় নির্দিষ্ট বাজার রয়েছে, যেখানে খামারিরা প্রতিদিন দুধ নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এই উপজেলায় এরকম কোন বাজার নেই। তবে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত নির্দিষ্ট বাজার গড়ে তোলার ব্যাপারে চেষ্টা করব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.