
তালিকা প্রণয়ন জটিলতায় রাজধানী ঢাকা ও বরিশাল মহানগর বাদ দিয়ে আগামী ২০ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ‘ফ্যামেলি কার্ড’র মাধ্যমে সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে কাল রবিবার (২০ মার্চ)।
এরপর আগামী ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হবে এই কার্যক্রমের দ্বিতীয় ধাপ। সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্যামিলি কার্ডধারীরা টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন। তবে দ্বিতীয় ধাপে পণ্য বিক্রি কবে নাগাদ শেষ হবে, তা জানানো হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০ মার্চ বিশেষ এ কার্ডের মাধ্যমে একসঙ্গে পণ্য কিনতে পারবেন ঢাকা ও বরিশাল সিটি ছাড়া সারা দেশের ৮৭ লাখ ১০ হাজার মানুষ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন ফ্যামিলি কার্ডের আওতার বাইরে থাকবে। ঢাকার দুই সিটির ১২ লাখ এবং বরিশালের ৯০ হাজার উপকারভোগী পরিবার টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছে টিসিবি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন দেশের মোট ৩৮ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাভোগী পরিবার। এই ৩৮ লাখ ৫০ হাজার পরিবার পাচ্ছে টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত করা হয়েছে আরও ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে। এ কাজে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করছে। সুবিধাভোগী পরিবার নির্বাচন করতে সরকারের সামাজিক বলয়ের আওতায় থাকা নিম্ন আয়ের মানুষদের তালিকার বাইরেও নানা বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি এই উদ্যোগের ফলে দেশের স্বল্প আয়ের ৫ কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন বলে সরকার মনে করে।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, তবে ঢাকায় অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছে, তাই তাদের এই ফ্যামেলি কার্ডের আওতায় আনা যাচ্ছে না। ঢাকার বাইরে বরিশালেও এই তালিকা প্রণয়নে জটিলতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর করোনা প্রণোদনা তালিকাও বরিশালে করা যায়নি। করোনার সময় যারা প্রণোদনা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন, তারাসহ নিম্নবিত্ত আরও ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার এই কার্ড পাচ্ছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। তালিকা প্রণয়ন জটিলতায় এর বাইরে থাকছে ঢাকা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান জানান, দেশের মোট এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দেওয়া হবে। করোনাকালে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে নগদ সহায়তা দিতে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্য থেকে ৩০ লাখ পরিবার এ বিশেষ কার্ড পাচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৫৭ লাখ ১০ হাজার উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা ২০ মার্চ থেকে ফ্যামেলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারবেন। এছাড়া ফ্যামেলি কার্ডের বাইরে থাকা ঢাকার দুই সিটির ১২ লাখ ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯০ হাজার পরিবার টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।
টিসিবি জানায়, ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্বে এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মাঝে ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৩ এপ্রিল থেকে এসব পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি ছোলা যুক্ত হবে।
টিসিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ৮ মার্চ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলায় পণ্য পাঠানো শুরু হয়েছে। এসব জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে টিসিবির পণ্য পৌঁছে গেছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদফতর, বিএডিসি ও নির্ধারিত গুদামে টিসিবির পণ্য গ্রহণ ও প্যাকিং চলছে। ২০ মার্চ থেকে পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
Leave a Reply