১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিইসি যারা

নির্বাচন কমিশন

স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ১২ জন। সাবেক সিইসিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি এ.কে.এম. নুরুল ইসলাম। তিনি সর্বোচ্চ প্রায় আট বছর এ পদে ছিলেন। সর্বনিম্ন ১০ মাস সিইসি ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিইসি পদে নিয়োগে এগিয়ে আছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা। সাবেক ১২ সিইসির মধ্যে সাতজনই ছিলেন বিচারপতি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিইসি ছিলেন একজন বিচারপতি। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক এ পদে বিভিন্ন মেয়াদে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাই দায়িত্ব পালন করেছেন। তুমুল বিতর্কের মুখে ২০০৭ সালের শুরুতে যিনি সিইসি পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তিনিও একজন বিচারপতি।

এর মাঝে এই পদে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা। যাদের কেউ কেউ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পর যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের(বিসিএস) কর্মকর্তা হিসেবে। সাবেক আমলাদের মধ্যে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে সিইসি পদে প্রথম নিয়োগ পান মোহাম্মদ আবু হেনা। আমলাদের মধ্যে সর্বশেষ দায়িত্বে ছিলেন সদ্যসাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হন বিচারপতি মো. ইদ্রিস। তিনি পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৭৭ সালে বিদায় নেন। এর পরই সিইসি পদে আসেন আরেক সাবেক বিচারপতি এ.কে.এম. নুরুল ইসলাম। তিনি ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ প্রায় আট বছর সিইসি পদে ছিলেন।

বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি চৌধুরী এ.টি.এম. মাসুদ। ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী পাঁচবছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিদায় নেন ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। বিচারপতি সুলতান হোসেন খান ছিলেন দেশের চতুর্থ সিইসি। তিনি ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ১০ মাস ছিলেন এই দায়িত্বে।

১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিইসি পদে আসেন বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ। চার বছর চার মাস দায়িত্ব পালন শেষে তিনি বিদায় নেন ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল। বিচারপতি এ.কে.এম সাদেক ১৯৯৫ সালের ২৭ এপ্রিল সিইসি পদে নিয়োগ পেলেও এক বছরের বেশি ওই পদে ছিলেন না। ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল ছিল তার দায়িত্বের শেষ দিন।

টানা ছয়জন সাবেক বিচারপতি সিইসি পদে দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতা ভাঙেন সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনা। ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পান তিনি। ২০০০ সালের ৮ মে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন আবু হেনা। তিনি চার বছর সিইসি পদে ছিলেন।

২০০০ সালের ২৩ মে সিইসি পদে নিয়োগ পান আরেক সাবেক সচিব এম এ সাইদ। তিনি পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করে ২০০৫ সালের ২২ মে বিদায় নেন। তারপরই সিইসি পদে আসেন বিচারপতি এম.এ. আজিজ। ২০০৫ সালের ২৩ মে সিইসি পদে শপথ নেন তিনি। কিন্তু নিরপেক্ষতার প্রশ্নে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়তে হয় তাকে। পরে মাত্র এক বছর আট মাসের মাথায় ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।

আজিজ কমিশনের বিদায়ের পর ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পান সরকারের সাবেক সচিব এ.টি.এম শামসুল হুদা। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেন।

২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সিইসি পদে আসেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। তিনিও পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেন। এর পরই সর্বশেষ প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে শপথ নিয়েছিলেন কে এম নূরুল হুদা। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিয়েছেন।

২০২২ সালে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আহসান হাবীব খান, সাবেক সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সচিব আনিছুর রহমান।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.