
গাজীপুরের শ্রীপুরে গণটিকার দিনে কেন্দ্রের বাইরে এক স্থানে টাকা নিয়ে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় দুই দালালকে আটক করেছে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে তাদের হেফাজতে নেন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি ভায়াল, ৫০টি সিরিঞ্জ ও টিকা বিক্রির বেশ কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার নিয়ে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। খোঁজ নিয়ে বেশ কিছু টিকা গ্রহীতার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে এক নারী দালাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন।
শনিবার দুপুরে তেলিহাটি ইউনিয়নের রঙ্গিলা বাজার এলাকা থেকে মুলাইদ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ও পার্শ্ববর্তী কাপাসি উপজেলার রানিগঞ্জ গ্রামের সুলতানা পারভিন (২০) নামের দুজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সারা দেশের মতো শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণটিকা দেওয়া হচ্ছিল। বিভিন্ন স্থানে টিকা প্রদানের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। দুপুরের একটু পরেই রঙ্গিলা বাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী বুথ বানিয়ে কারখানা শ্রমিকদের টিকা দেওয়া হচ্ছিল। কিছু নারী শ্রমিক টিকা নেওয়ার পর টিকা গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ও রিসিভ চাইলে তা দিতে গড়িমসি করতে থাকেন।
তারা আরো জানান, টিকার জন্য জনপ্রতি চারশ থেকে পাঁচশ টাকা নেওয়া হয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তির ভয়ে মানুষ টাকা দিয়ে টিকা দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে উপজেলার, পৌর শহরের মাওনা এলাকায় মসজিদ মোড় গ্রামে ও বরমী ইউনিয়নের কাশিজুলি, দপ্তরি ভিটা, ঠাকুরতলা, ভিটিপাড়া এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে একশ/দুশ টাকার নিয়ে করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ভ্যাকসিন ভায়াল নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়া হয়।
ভিটিপাড়া এলাকার একাধিক টিকা গ্রহীতা ব্যক্তি জানান, আমাদের বাড়ি থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দুরে। পাশেই কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু ওখানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নেওয়া খুবই সমস্যা। অনেক সময় সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় দৈনিক হাজিরা কামলার রোজ নষ্ট হয়। এতে তার দৈনিক চারশ থেকে পাঁচশ টাকা ক্ষতি হয়। পরে স্থানীয় কয়েক দালাল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করে বাড়িতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
এদিকে শুক্রবার মাওনা এলাকার মসজিদ মোড় এলাকায় নাছরিন আক্তার নামে এক নারী দালাল বেশ কজনকে টিকা দেন টাকার বিনিময়ে।
তিনি জানান, হাসপাতালে অনেকের সঙ্গে তার পরিচয় থাকায় তাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন ভায়াল নিয়ে মানুষদের দিয়েছেন। দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার সময় তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে টিকা গ্রহীতা দেলোয়ারের কাছ থেকে নেওয়া ৩০০ টাকা ফেরত দেন নাছরিন।
দপ্তরি ভিটা এলাকার এক নারী জানান, আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের চারজনকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দিয়ে গেছে হাসপাতালের লোক। দ্রুত করোনা টিকা শেষ হয়ে যাবে শুনে বাড়িতেই ব্যবস্থা করলাম। এ সময় স্বাস্থ্য কর্মীরা চার পাঁচশ টাকা নিয়েছে মোটরসাইকেলের তেলের খরচ বাবদ।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকা সমন্বয় কর্মকর্তা মাজেদ সোহাগ জানান, এমন করার কোনো সুযোগ নাই। আমরা কর্মীদের টিকা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় হিসাব রাখি ও আবার ফেরত নেওয়ার সময়ও হিসাব রাখি। তবে কেউ যদি কেন্দ্রে মানুষকে টিকা না দিয়ে ভায়াল আড়াল করে বাড়িতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে দিয়ে আসে তাহলে বোঝা মুশকিল। আমরা গণটিকা কার্যক্রম নিয়ে চরম ব্যস্ততায় আছি। এ সুযোগেও কেউ কেউ এমনটি করে থাকতে পারে।
স্থানীয় সমাজকর্মী সাঈদ চৌধুরী জানান, সরকারের এমন কার্যকরী পদক্ষেপ অল্প কয়েকজন অর্থলোভীদের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। সব জায়গাতেই অসাধু অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী থাকে। তবে তারে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
শ্রীপুর মডেল থানার এসআই কামরুল হাসান জানান, রঙ্গিলা বাজার এলাকায় গার্মেন্টস কল্যাণ ঐক্য ফোরাম নামে একটি অফিসে বসে টাকার বিনিময়ে করোনা টিকার দেওয়ার সময় স্থানীয়রা দুজনকে আটক করেছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি ব্যবহার করা করোনা ভ্যাকসিনের খালি ভায়াল ও তিনটি ভর্তি ভায়ালসহ ৪৭টি সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, শুনেছি এমন কিছু হয়েছে। তবে এভাবে টিকা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। টিকা দেওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছে। আটকেরা কোথা থেকে করোনা টিকা পেয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
তবে এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের কাছে জানতে সরকারি ফোন নম্বরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সুত্রঃ দেশ রুপান্তর
Leave a Reply