টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনার টিকা নিতে আসা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে। এতে অনেক শিক্ষার্থী টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিতে আসে। টিকা দেওয়া শুরু হলে আগে টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নিয়োজিত ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করেন। লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। অনেকেই পাশের নর্দমায় পড়ে আহত হন। ওই কেন্দ্রে রেড ক্রিসেন্টের পোশাকধারী আরও ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে সময় টিকা না নিয়েই বিরক্ত হয়ে আবার কেউ অসুস্থ হয়ে ফিরে যায় বাড়ির দিকে।

আখানগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিরিন আকতার বলেন, ‘সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আমাদের স্কুল থেকে প্রায় ৩০টি ইজিবাইকে করে আমরা হাসপাতালে এসেছি। নয়টার দিকে এসে দেখি প্রচুর ভিড়। লাইনে দাঁড়াতেই শুরু হলো লাঠিপেটা। লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে আমার তিন সহপাঠী নর্দমায় পড়ে আঘাত পায়।’

গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা ইসলাম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে এসেছে টিকা নিতে। কিন্তু টিকা কেন্দ্রে ভিড় আর স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে থাকা লাঠি দেখে ভয় পায় সে।

ফাহিমার বড় ভাই সজল বলেন, টিকাকেন্দ্রে হাজার হাজর শিক্ষার্থী টিকা নিতে আসছে। কিন্তু এখানে টিকা নিতে এসে শিক্ষার্থীদের নাকাল অবস্থা। অনেক ভিড়ের কারণে স্বেচ্ছাসেবীরাও সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘দিনের পর দিন টিকাকেন্দ্রে এসেও করোনার টিকা না নিতে পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে টিকা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকে।’

পারপুগী উচ্চ বিদ্যালয়ের তানিশা মিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে শৃঙ্খলতার কোন বালাই নাই। স্বেচ্ছাসেবীদের হাতের লাঠিতে কেউ একজন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এ নিয়ে অনেকক্ষণ এখানে দৌড়-ঝাপের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। আসলে এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ টিকা না দিয়ে বাড়ি চলে যাবে। আমিও চলে যাচ্ছি।’

টিকাপ্রদান কাজে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেচ্ছাসেবী বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নাই। এত শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৬টা বুথে ১৯ জন মানুষকে দিয়ে টিকা কাভার করা সম্ভব না। আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এখানে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আধুনিক সদর হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের ফাইজার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পুরাতন সদর হাসপাতালে বুস্টার ডোজ ও করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। বুথ সংখ্যা কম থাকায় কেন্দ্রের পাশে ভিড় জমছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার ঘটনা দুঃখজনক।’

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনার টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখব। আর শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিতে কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখছি।’

উল্লেখ্য, সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। জেলায় বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০২ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ ও ৬২ হাজার ৮৮ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে বুধবার ৩ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়। আজ ওই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.