বয়স ধরে রাখতে ত্যাগ করবেন যে অভ্যাস

চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জনপদ ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার ছিল এক সময় তাঁত ও হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। পার্বত্য জনপদের বিভিন্ন জেলায় তাঁতের শৈল্পিক বুননের নানার কর্মকাণ্ড দিনে দিনে জেগে উঠছে। শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে থাকা কিছু মানুষ এখন হাঁটছে আলোর পথে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে মীরসরাই উপজেলার উপজাতি ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠির নারী শিল্পীদের তাঁত ও  পাটি পাতার হস্তশিল্প।

নিজেরাই এখন তৈরি করছে নিজেদের পরিধানের নানা বস্ত্র। মাত্র কয়েকটি কাঠের টুকরো দিয়েই অনন্য শৈল্পিকভাবে করছে শিল্পকর্ম।

শৈল্পিক এসব শিল্পকর্ম চলছে, করেরহাটের পাহাড়ি জনপদ সাইবেনিখীল, ঘেড়ামারা, কয়লা, রামগড়, মীরসরাই তালবাড়িয়া ত্রিপুরা পাড়াসহ পাহাড়ি জনপদে। আবার উপজেলার মিঠানালা, দুর্গাপুর, হাইতকান্দি, ইছাখালী, কাটাছরা এলাকার নারীর অবসর সময়ে পাটি বুনন ও পাটি পাতা দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিলুপ্তির পথে হারিয়ে যেতে বসেছিল এই শিল্পটি।

তবে যারা এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে উচ্চমূল্যের কাঁচামাল আর কমতির দিকে থাকা চাহিদার সঙ্গে। এসব কারণে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া শখের এই পেশাটি। তবে সময়ের প্রয়োজনে সহজসাধ্য এই পেশা এখন নানান শৈল্পিক উপকরণের সমন্বয়ে ধরা দিচ্ছে গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবিতে।

উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু উপজাতিপাড়া নয়, মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং দুই পৌরসভায় তৈরি হচ্ছে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, টুপি, হাতব্যাগ, লেডিস পার্টস ও নানান রকম সুন্দর ওয়ালমেট।

আবার রয়েছে মীরসরাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বহুল প্রসিদ্ধ পাটিপাতার নানান উপকরণও। সঙ্গে শীতল পাটি তো রয়েছেই। পাটের তৈরি শীতল পাটির হাতব্যাগ, শোপিচ, ঝুড়ি, ওয়ালমেটসহ নানান সামগ্রি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এক সময় মীরসরাই উপজেলার শীতলপাটির সুনাম ছিল দেশজুড়ে। এখানকার পাটি সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও দেশ-বিদেশে।

করেরহাটের উপজাতিপাড়ার বৃদ্ধা চারুবালা বলেন, কিছু প্রতিকূলতার জন্য এগোতে পারছে না এই তাঁত ও কারুশিল্প। বিশেষ করে সুতা ও উপকরণগুলো সুদূর খাগড়াছড়ি থেকে আনতে হয়। আবার এখানে নেই কোনো ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রও। হাতের কাছে কাঁচামাল ক্রয় ও উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধা থাকলে আমাদের এ পাহাড়ে অনেক সুন্দর তাঁত শিল্প সম্ভব বলে জানালেন উপজাতিপাড়ার সবাই।

স্থানীয় করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমি চাইছি খুব শীঘ্রই আমার এলাকার তাঁতের পোশাক উৎপাদনকারীদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে একটি মতবিনিময় করবো। আমাদের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেসের উত্তরসূরি আইটি বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান রুহেলও ইতোমধ্যে উপজাতীদের কল্যাণে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন; যা শীঘ্রই কার্যকর হবে আশা করছি।

মীরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবরিনা লিনা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাটি শিল্প ও পাটি শিল্পের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগের আহ্বান জানাবেন। এছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ঋণের ও সুপারিশ করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.