শেখ পরিবারের পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ডা. ইফতেখার

ঢাকাঃ জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এখন বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে নিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সেই সুনামকে ক্ষুন্ন করছেন শেখ পরিবারের কেউ না হয়েও ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন শেখ পরিবারের গর্বিত সন্তান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে এহেন অপকর্ম নেই যা করছেন না তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ডাঃ  মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির সন্তান মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড এর ঢাকা বিভাগীয় সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ঢাকার কলাবাগানের বশির উদ্দিন রোডে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও মাদারীপুরের শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক তিনি। শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবেই তিনি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিভাগীয় শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ডিএইচএমএস ডক্টরস এসোসিয়েশনের সভাপতি।।

হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে এবং নিজেকে শেখ পরিবারের গর্বিত সদস্য পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করে নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে এহেন কর্ম নেই যা তিনি করছেন না।

তবে ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন শেখ পরিবারের সদস্য কিনা জানতে চাইলে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম  সম্পাদক শেখ সোহেল রানা বলেন, এই নামে রাজবাড়ীতে শেখ পরিবারের কেউ আছে এই প্রথম শুনলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা অপকর্ম করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শেখ পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি অপকর্ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেখ মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ও চেম্বারে বসলেও তিনি কিভাবে শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তা জানতে চাইলে শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এমদাদুল হক খান এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

তবে কলেজ্ সূত্র জানিয়েছে ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলের নামে ‘শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ’ নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ২০২০ সালে এসে হাসপাতাল কার্যক্রম চালুর অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। সেই ২০১৫ সাল থেকে খাতা কলমে ইফতেখার উদ্দিন এখানকার শিক্ষক তবে কোনদিন ক্লাসে আসেননি তিনি। শেখ পরিবারের সদস্য পরিচয়ে তিনি এখানে না আসলেও দাপিয়ে বেড়ান।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের একজন নাম ও পদধারী শিক্ষক হলেও এই কলেজের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি এবং কলেজটির তৎকালীন অধ্যক্ষ ডাঃ মাহবুবুর রহমান সভাপতি। একজন খাতা কলমে থাকা শিক্ষক প্রধান অতিথি অন্যদিকে অধ্যক্ষ সভাপতিত্ব করছেন এটা তখন কলেজটিতে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি করে। যদিও নবীন বরণ অনুষ্ঠানের ব্যানারে ইফতেখার উদ্দিনকে বোর্ড সদস্য ও ডিএইচএমএস এর সভাপতি পরিচয় দেয়া হয়।

ডা. শেখ ইতেখার উদ্দিন একাধারে শুধু হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের সদস্য এবং মাদারীপুরের হোমিওপ্যাথিক কলেজের শিক্ষক কিংবা ডিএইচএমএস ডক্টরস এসোসিয়েশনের সভাপতিই নন তিনি রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডেকেলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যও।

ইফতেখার উদ্দিন শেখ পরিবারের গর্বিত সন্তান এবং বোর্ড সদস্য এবং ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ায় ফেডারেল মেডিকেলে তার ২য় স্থী অহিদা আক্তারকে (যিনি ঢাকাস্থ উত্তরা হোমিওপ্যাথিক কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী) শিক্ষক নিয়োগ দেন। ঝালকাঠির ফিরোজা আমু হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন দেখিয়ে এই কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করান। যদিও ২০০৫ সালে এই কলেজটির অস্তিত্বও ছিল না।

ফেডারেল মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ সোনা মিয়া ওরফে মিজানুর রহমান একই সাথে আইন পেশার (ঢাকা বারের সদস্য) সাথে হলেও তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে ইফতেখার উদ্দিন বড় ভুমিকা পালন করেন।  সরকারি এবং বেসরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী কোন শিক্ষক যদি ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হোন তার গ্রেফতারের দিন থেকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত বলে গণ্য করার কথা। এই বিধিমালা অনুযায়ী কলেজের অস্থায়ী শিক্ষক ফিরোজ হোসেনকে ২০১৭ সালের ৭ জুন সাময়িক বরখাস্থ করা হলেও একই বছর ডিসেম্বরে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে স্বপদে বহাল করেন তিনি। এছাড়াও কলেজের অপর শিক্ষক যে এম নুরুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নভেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ১ এর আদেশে শেরে বাংলা নগর থানা কর্তৃক জেল হাজতে প্রেরিত হলে মামলা নিষ্পত্তি না হলেও দুই লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তিনি এই শিক্ষককে সকল সুবিধা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করেন।

শেখ পরিবারের না হয়েও শেখ পরিবারের গর্বিত সন্তান পরিচয় দেওয়া ও বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ইফতেখার উদ্দিন বলেন তিনি শেখ পরিবারের সন্তান তার বাড়ী গোপালগঞ্জের  টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবার বাড়ী রাজবাড়ী সদরে উল্লেখ করলে তিনি বলেন আমরা এখানে পরবর্তীতে বাড়ী করেছি। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি ব্যস্ত আছেন কথা বলতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেন।

উল্লেখ্য, অনেক দিন থেকে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মনোনয়নে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়কে ভুল বুঝিয়ে তথ্য গোপন করে বছরের পর বছর বিভাগীয় রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক প্রতিনিধি সদস্য পদে চাকরিরত শিক্ষকদের বোর্ড পরিচালনা পর্ষদে অনৈতিক বানিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ চলছে। অডিন্যান্স ১৯৮৩- ৪(১)সি অনুযায়ী বিভাগীয় রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রতিনিধি সদস্য পদে চাকরিরত শিক্ষকদের বোর্ড সদস্য হওয়ার কোন এখতিয়ার নেই। অথচ বিগত বছর গুলোতে প্রকৃত রেজিষ্ট্রার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রতিনিধিদের কে বাদ দিয়ে তথ্য গোপন করে চাকরিরত শিক্ষক বিভাগীয় শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকলেও তারা অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে তথ্য গোপন করে বিভাগীয় রেজিষ্ট্রার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রতিনিধি সদস্য পদ ভাগ-ভাটোয়ার করে ভাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে সকল শিক্ষরা এ অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িত তারা হলেন (১) ডা: শেখ মোঃ ইখতেখার উদ্দিন, মাদারীপুর শেখ কামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্মরত (২) ডা: আষিশ শংকর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাতিক মেডিকেলে কর্মরত, (৩) ডা: ইসরাফিল হোসেন মুন্সী খুলনা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত,(৪) ডা: ইমদাদুল হক সিলেট শাহ জামাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেলে কলেজ কর্মরত, (৫) ডা: এন ইসলাম প্রমূখ বরিশাল অনেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে কর্মরত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.