লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: নিখোঁজ কতজন জানে না কেউ

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান–১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তার সঠিক হিসাব এখনো কেউ দিতে পারছেন না। দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে বরগুনা নৌ বন্দর,  সুগন্ধা তীরের দিয়াকুল গ্রামে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে আসতে থাকেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

শুক্রবার রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মরদেহ নিয়ে আসলে সেখানেও ভীড় জমান স্বজনরা। এছাড়া শনিবার সকাল থেকে দিনভর এবং রোববার সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোঁজ নিতে আসেন স্বজনরা।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছোট টেংরা গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে পপি আক্তার সাভারের হেমায়েতপুরে একেএইচ গ্রুপে পোষাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। গ্রামের বাড়ি থেকে মেয়েকে দেখতে লঞ্চে বরগুনা আসছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত নিঁখোজ তিনি।

একইভাবে বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখাল এলাকার রাজিয়া সুলতানা ও তার মেয়ে নুসরাত নিখোঁজ রয়েছেন। রাজিয়ার বড় মেয়ে তানজিলা ইমু জানান, ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সবখানে খুঁজেছি মা’র কোনো সন্ধান পাইনি। ঠিক একইভাবে বরগুনা সদরের অন্তত ২০জন নিঁখোজ ব্যক্তিদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন স্বজনরা। কিন্ত সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরগুনা জেলা প্রশাসন নিঁখোজদের তালিকা করতে সেল গঠন করছেন।

এখনো পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কাছে ২৫ জনের তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছে সেলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আবু সাইদ।

স্বজনদের খোঁজে আসা বাবুল জানান, তাঁর ভাইয়ের মেয়ে সোনিয়া (২৫), সোনিয়ার দুই ছেলে জুবায়ের (৬) ও জুনায়েদ (২) এবং তাঁর মা রেখা বেগম দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগি গ্রামে যাচ্ছিলেন। লঞ্চে আগুন লাগার পরপরই সোনিয়া তার ছয় বছরের শিশু জুবায়েরকে নিয়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও দুই বছরের জুনায়েদ ও মা রেখা বেগমকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের উত্তম হালদার খুঁজছিলেন ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণ হালদারকে (১৪)। নিখোঁজ কৃষ্ণ ঢাকার উত্তরার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। কৃষ্ণ হালদার মা গীতা রানি ও ছোট ভাই প্রত্যয়কে নিয়ে বামনার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল।

উত্তম হালদার বলেন, দুর্ঘটনার পর গীতা রানি প্রত্যয়কে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তাঁরা তীরে উঠতে সক্ষম হলেও কৃষ্ণ নিখোঁজ।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের বাসিন্দা মো. রনি (১৫) খুঁজছিল মা রীনা বেগম ও বোন লিমাকে। বারবার আহতদের শয্যার কাছে গিয়ে মা আর বোনকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে রনি। রনি নিজেও এ ঘটনায় আহত হয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবু্র রহমান জানান, ৩৭ জনের মরদেহের মধ্যে ১৪ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ২৩ জনের জন্য স্বজনদের সন্ধান চলছে। পোড়া মরদেহগুলোর চেহারার কোনো আকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। তাঁদের স্বজনরাও এসে খুঁজছেন। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় স্বজনদের ডিএন নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের পর বাকী ২৩ মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে সেখানে এখনো ২৩জন চিকিৎসাধীন আছেন, এছাড়া ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে আরো ১৯জনকে। সবমিলিয়ে ৫০ জনের মত ব্যক্তি চিকিতসাধীন রয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক আজগর আলী জানান, ঢাকা নৌ বন্দর ছাড়ার সময় লঞ্চটিতে ৩১০ জন যাত্রী ছিল। তবে দূর্ঘটনার পর কতজন নিখোঁজ এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। র‍্যাব, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শুরু করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.