
ঢাকাঃ নদীতীর সংরক্ষণের একটি প্রকল্পে কাজের পরিমাণ না বাড়লেও ২২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার চেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধরা হয়েছে অতিরিক্ত দাম; যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরোশর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (প্রজেক্ট-২)’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) ড. মো. আবদুর রৌফ সময়ের আলোকে বলেন, এখন অনেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আগে যে দাম প্রস্তাব করা হয়েছিল পরবর্তীতে বাজারে সেসব ক্ষেত্রে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও বেশি দামের প্রস্তাব করেছি। এ ছাড়া কাজের পরিমাণ একই থাকলে দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৮১ কোটি ৩৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা এবং প্রকল্প সাহায্যে ১ হাজার ৪৬৮ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭৮১ কোটি ৩৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। কিন্তু পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী সার্বিক ব্যয় ২১ কোটি ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় নতুন অঙ্গ হিসেবে গাড়ি ভাড়া চার্জ বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এডিবি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফি বাবদ ২ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা এর আগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সিদ্ধান্তে উল্লেখ ছিল না। প্রস্তাবিত প্রথম পিইসি সভায় উপস্থাপিত ডিপিপিতে ৭.৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বাবদ ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে কাজের পরিমাণ একই রেখে ৩ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে মোট ৩৯ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রথম পিইসি সভায় উপস্থাপিত ডিপিপিতে ৪০ কিলোমিটার এডাপ্টেশন ওয়ার্ক বাবদ ২৩৪ কোটি ১২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে কাজের পরিমাণ একই রেখে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে মোট ২৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট চার্জ বাবদ ৩৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং পিএমইউ-ডিডিএম পরিচালন বাবদ ১৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রাইস কন্টেনজেন্সি বাবদ ৪৪ কোটি ৩৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ও ফিজিক্যাল কন্টেনজেন্সি বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় স্টাফদের বেতন বাবদ ২ কোটি ৪৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা, পিএমও সাপোর্ট এক্সপার্ট বাবদ ৪৯ লাখ টাকা, পিএমও পরিচালন ব্যয় বাবদ ১৯ হাজার টাকা, রেগুলেটর নির্মাণ বাবদ ৯ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ছাউনি নির্মাণ বাবদ ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, নদীতীর সংরক্ষণ বাবদ ১৩ কোটি ৮০ লাখ ২৯ হাজার টাকা এবং যানবাহন ক্রয় বাবদ ৫ কোটি টাকা হ্রাস করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর (যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা) ভাঙন রোধ করে উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় ২০০২ থেকে ২০১১ সালে যমুনা ও মেঘনা রিভার ইরোশন মিটিগেশন প্রজেক্ট শীর্ষক একটি প্রকল্প বাপাউবো বাস্তবায়ন করা হয়।
এই প্রকল্পের অধীন যমুনা ও মেঘনা নদীর ভাঙনকবলিত ২৮.৪৪ কিলোমিটার অংশে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয় যেখানে সম্পূর্ণ নতুন এবং ব্যয় সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামূলক নদীতীর সংরক্ষণ কাজগুলো কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়। এ অবস্থায় একই রকম ব্যয় সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের প্রধান নদীগুলোর ভাঙনকবলিত অংশে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য জাপান সরকারের আর্থিক অনুদানে ২০১২ সালের জুন হতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিবি নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হয়।
এই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের সুপারিশের জন্য এডিবি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন এফআরইআরএমআইপি (ট্রান্স-১) প্রকল্পে ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং রাজকীয় নেদারল্যান্ডস সরকার ১৫.৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি ঋণ অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি মোতাবেক বর্তমানে ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুনে ট্রান্স-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৩০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ, ৭.৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ এবং ৪০ কিলোমিটার এডাপ্টেশন ওয়ার্ক করা। এছাড়া ৬ কিলোমিটার ইমার্জেন্সি, ৩ কিলোমিটার বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ, একটি অফটেক ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্ক উইথ স্ট্রাকচার, পাইলট ল্যান্ড রিকভারি ড্রেজিং উইথ ক্লোজার, ২টি রেগুলেটর ফিসপাস, ১২টি মৎস্য অভয়াশ্রম উন্নয়ন এবং ১০২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। সুত্রঃ সময়ের আলো
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/৩০/১১/২০২১
Leave a Reply