
ঢাকাঃ দীর্ঘদিন মহামারির প্রকোপ শেষে দেশের সিনেমায় আবারও সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে মুক্তির তালিকায় ছিল একাধিক সিনেমা। সেই সংখ্যা আরও বাড়ছে ডিসেম্বরে। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে দিয়ে বছরের শেষ মাসে বড়পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে আলোচিত ৩ নায়িকার। তারা হলেন- জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, তাহমিনা অথৈ ও নিশাত নাওয়ার সালওয়া।
এখন পর্যন্ত জানা গেছে ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে ৮ সিনেমা। সেই তালিকার ‘মিশন এক্সট্রিম’ নিয়ে অনেক দিনের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে। কারণ একদিকে এটি যেমন বছরের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা, অন্যদিকে লম্বা বিরতির পর পর্দায় ফিরছেন আরিফিন শুভ। ৩ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের যৌথ পরিচালনায় ‘মিশন এক্সট্রিম’। এরই মধ্যে বেশ উদ্যম নিয়ে চলছে সিনেমাটির প্রচারণা। এই সিনেমা দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ খ্যাত জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর।
করোনার পরবর্তী সময়ে দর্শকরা আবারও হলমুখী হতে শুরু করেছেন। তাই বছরের শেষ মাসের সিনেমাগুলো নিয়েও বেশ আশাবাদী স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যৈষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হলে দর্শকদের উপস্থিতি নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। গত দুই মাসে কয়েকটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। শুরুতে দর্শক সংখ্যা কম থাকলেও এখন তারা হলমুখী। বছরের শেষ মাসে যে কয়টি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে সেগুলোও ভালো ব্যবসা করবে বিশ্বাস করি। এখন বাকিটা সিনেমার ওপর নির্ভর করবে।’
‘মিশন এক্সট্রিম’ মুক্তির পরের সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে উঠবে আরও দুটি সিনেমা। সেগুলো হলো ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘কালবেলা’।
সাইদুল আনাম টুটুলের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘কালবেলা’। পুরো সিনেমা সম্পূর্ণ করার আগেই মারা যান এই গুণী নির্মাতা। তার মৃত্যুর তিন বছর পর শেষ হয় তার অসমাপ্ত কাজ। ‘কালবেলা’ ১৯৭১-এ একজন নারীর সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে নির্মিত। এতে উঠে আসবে যুদ্ধকালীন সাধারণ মানুষের আশ্রয়ের সন্ধানে অনিশ্চিত যাত্রা, অবরুদ্ধ শহরে কর্মজীবীদের বিপন্নতা, বিহারি ও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নৃশংসতা এবং যুদ্ধকালীন সামাজিক অস্থিরতা। সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ এবং শিশির আহমেদ। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন মাসুম বাশার, মিলি বাশার, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জ প্রমুখ।
অন্যদিকে ১০ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে নূরুল আলম আতিকের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। এটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায়। সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, ভাবনা, অশোক ব্যাপারী, আশীষ খন্দকার, জয়রাজ, শিল্পী সরকার, ইলোরা গওহর, জ্যোতিকা জ্যোতি, দিলরুবা দোয়েল, স্বাগতা, শাহজাহান সম্রাট, দীপক সুমন প্রমুখ।
১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে দুটি সিনেমা ‘বিয়ে আমি করব না’ ও ‘পরানের পাখি’। রকিবুল আলম রকিব পরিচালিত ‘বিয়ে আমি করব না’। এতে জুটি বেঁধেছেন মামুনুন হক ইমন ও তানহা তাসনিয়া। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন কাজী হায়াৎ, বড়দা মিঠু প্রমুখ। ‘পরানের পাখি’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন খোরশেদ আলম খসরু। এতে অভিনয় করেছেন আরমান, শীতল, ডন, লামিয়া, সুব্রত প্রমুখ। এই দুটি সিনেমা মুক্তির তালিকায় থাকলেও এ নিয়ে নেই কোনো আলোচনা। প্রচারণার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে। আর দর্শকদেরও এই ধরনের সিনেমা থেকে আগ্রহ বিলীন হচ্ছে দিন দিন।
মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ বলেন, ‘সিনেমার অবস্থা অনেক খারাপ। যেগুলো মুক্তি পাচ্ছে সেগুলোও ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হচ্ছে না। যেই ধরনের সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো দিয়ে ব্যবসা হয় না। এখন সিনেমা হলের সংস্কারের জন্য তো ব্যবসা প্রয়োজন। আমরা চাই কলকাতার ও হিন্দি সিনেমার বাজার এখানে গড়ে উঠুক। এতে যেমন ব্যবসা হবে তেমনি প্রতিযোগিতাও বাড়বে। সরকার হল সংস্কারের জন্য লোন বরাদ্দ করেছে। কিন্তু দেশের সিনেমা দিয়ে যদি ব্যবসা না হয় পরে সেই লোন হল মালিকরা কীভাবে শোধ দেবেন? মাল্টিপ্লেক্সের সময় এখন। বাজারের টিকে থাকতে হলে সেভাবেই সবাই গড়তে হবে। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়িক উন্নতি। দেশে এখন যেই সিনেমা হচ্ছে সেগুলো দিয়ে ব্যবসা হচ্ছে না।’
২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ ও ‘আগামীকাল’। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ সিনেমায় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদর আজাদ চৌধুরী, নিশাত নাওয়ার সালওয়া, মিথিলা, আলীরাজ, সুব্রত, রেবেকা ও মারুফ। অন্যদিকে অঞ্জন আইচ পরিচালিত ‘আগামীকাল’-এ জুটি বেঁধেছেন ইমন ও মম। এ ছাড়াও অভিনয় করেছেন টুটুল, শতাব্দী ওয়াদুদ ও সূচনা আজাদ।
বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ মীর সাব্বিরের প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘রাত জাগা ফুল’। তার পরিকল্পনা ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে মার্চে মুক্তি দেবেন সিনেমাটি। কিন্তু মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। থ্রিলার ও রোমান্টিক ধারার ‘রাত জাগা ফুল’-এর কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য মীর সাব্বির নিজেই লিখেছেন। এ ছাড়া বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী ও আবু হুরায়রা তানভীর। এতে আরও অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, আবুল হায়াত, শর্মিলী আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, এজাজুল ইসলাম, নাজনীন চুমকী, জয়রাজ, আবদুল্লাহ রানা প্রমুখ।
২০২০ সাল ছিল ঢালিউডের সম্ভাবনাময়ী বছর। কিন্তু বাধা হয় করোনা। তবে আশার আলো দেখা দিয়েছে চলতি বছরের শেষদিকে। আর ২০২২ হতে যাচ্ছে নতুন এক সম্ভাবনার বছর। আটকে থাকা ও নতুন অনেক সিনেমার নির্মাণ ও মুক্তির ঘোষণা রয়েছে আগামী বছর। এখন সেই সম্ভাবনার ফল ইন্ডাস্ট্রি কতটা পাবে তার জন্য আরও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/২৭/১১/২০২১
Leave a Reply