হিজড়াদের লেলিয়ে দিতেন জাহাঙ্গীর

সড়ক নির্মাণে বাধা দিলে হিজড়াদের লেলিয়ে দিতেন আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে সড়ক নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। যেসব ওয়ার্ডে জমি দখল করতে বাধা দেওয়া হতো, সেই জমির মালিককে হেনস্থা করত স্থানীয় কাউন্সিলরসহ জাহাঙ্গীরের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে জমি জবরদখলে লেলিয়ে দিতেন হিজড়াদের। গত সোম থেকে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন ঘুরে এমন লোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে।
এই প্রতিবেদককে ভুক্তভোগীরা বলেন, জমির ওপর নির্মাণ করা ঘর ভাঙার কাজে নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হামলা চালায়। তারা প্রকাশ্যে বলত জমি না ছাড়লে মেয়র বলেছেন হিজড়া দিয়ে বাড়ি দখল করতে।
দক্ষিণ শালনার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাথোরা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষিকা আফরোজা বেগম বলেন, কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম তার লোকজনকে নিয়ে দফায় দফায় আমার ১০ কাঠার জমিটির ওপর নির্মাণাধীন বাড়ি ভাঙচুর করতে আসেন। বাড়িটি ভাঙতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা হিজড়া দিয়ে দখল করে নেবে বলে হুমকি দিয়ে যান। পরে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানভীর আহমেদ, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ ও ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুর মান্নান চার শতাধিক লোক নিয়ে আসেন বাড়িটি ভাঙতে। এ সময় ১০-১৫ জন হিজড়াও তাদের সঙ্গে ছিল। বাধা দিলে হিজড়ারা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের ভেতর নিয়ে হাত-পা মুখ বেঁধে বেদম মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে বাড়ির ভেতরের রুমে নিয়ে হিজড়ারা মারধর করে। অন্যদিকে রাস্তা সংলগ্ন চার কাঠা জমি সিটি করপোরেশনের ভেকু দিয়ে ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ নিমিষেই ভেঙে চুরমার করে ফেলে। এরপর ওই মালামাল নিয়ে যায় একটি ট্রাকে করে। পরে ওই জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের কাজ করে। আফরোজা বেগম আরও বলেন, এখনও ওই সন্ত্রাসীদের উৎপাতে ঘরে থাকতে পারছি না। বাউন্ডারি না থাকায় প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে। গত বুধবার রাতেও বাসার আসবাবপত্র নিয়ে যায় দৃর্বৃত্তরা।
গাজীপুরের শালনা, কোনাবাড়ী, বোর্ড বাজার, গাছা ও টঙ্গী এলাকায় শতাধিক হিজড়ার আধিপত্য রয়েছে। ওই হিজড়াদেরই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন জাহাঙ্গীর আলম ও তার লোকজন।
কোনাবাড়ীর বাসিন্দা একজন নারী নাম প্রকাশ করার না শর্তে বলেন, আমরা হিজড়াদের উৎপাতে ঘরে ঠিকমতো বসবাস করতে পারতাম না। ঘরে ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে, তাদের সামনেই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করত হিজড়ারা। তারা হুমকি দিয়ে বলত, কাউন্সিলর, মেয়র যা বলে তা করতে। তা না হলে জোর করে বাড়ি দখলের হুমকি দিয়ে যেত। ওই নারী আরও জানান, মানসম্মানের ভয়ে তিনি জমি ছাড়তে বাধ্য হন। একই কথা বলেছেন রহিমা নামে এক নারী।
স্বামীহারা রহিমা বলেন, বাড়ির বেশিরভাগ অংশই দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সিটি করপোরেশনের ভেকু এনে জমি নিয়ে যায়। এ সময় তাদের সঙ্গে ৭-৮ জন হিজড়াও ছিল। দুই মেয়ের সামনেই হিজড়ারা এসে শরীর থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলে। পরে মানসম্মানের ভয়ে দুই হাজার টাকা দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেন তিনি। সুত্র সময়ের আলো
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/২৭/১১/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.