মিরপুরে পাকিস্তানের পতাকা উড়ানোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

ডেস্ক নিউজঃ পাকিস্তান ক্রিকেটাররা বাংলাদেশে এসে প্রথম দিনের অনুশীলনে নেমেই জন্ম দিয়েছে বিতর্কের। প্র্যাকটিসের সময় নিজেদের দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে তারা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই মিরপুর একাডেমি মাঠে অনুশীলন করার সময় পতাকা উড়িয়েছে তারা।
এই ইস্যুতে তোলপাড় চললেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পুরোপুরি নিশ্চুপ। কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও আসেনি তাদের পক্ষ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিচালক বলেছেন যে, এ ইস্যুতে বিসিবির একটা সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিত। আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রচলিত পতাকা আইনে, পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা অনুশীলনের সময় তাদের দেশের পতাকা ওড়াতে পারেন কিনা?
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে বিদেশি পতাকা উত্তোলন নিয়ে সুস্পষ্ট বিধিবিধান আছে। আইন অনুসারে শর্তসাপেক্ষে সাামজিক অনুষ্ঠানে বিদেশিরা তাদের দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকাও সম্মানজনক স্থানে পাশাপাশি উত্তোলন করতে হবে।
প্রথম দিনের মতো মঙ্গলবারও অনুশীলনের সময় শুধু নিজেদের পতাকাই উত্তোলন করেছে সফররত পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা।
পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এ আচরণকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে ঢাকা কোর্টের আইনজীবী জীবন জয়ন্ত বলেন, জাতীয় দলের খেলার সময় পাশাপাশি পতাকা উত্তোলনে কোনো বিধিনিষেধ নেই। মনে রাখতে হবে, এটা কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়। এটা শুধু পাকিস্তানের অনুশীলন সেশন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, সামনে বিজয়ের মাস। এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পতাকা উত্তোলন ইঙ্গিত দিচ্ছে ভিন্ন কিছুরই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেনি, সেটা বলার সুযোগ নেই।
পরপর দুদিন মিরপুরে পতাকা উড়িয়েছে সফরকারীরা। এ নিয়ে বিসিবির কোনো হেলদোল নেই। বেশ কয়েকজন পরিচালক অবশ্য এই ইস্যুতে আলোচনার ভিত্তিতে বিসিবি থেকে একটা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হবে, এমন আশ্বাস দিয়েছেন।
বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বোর্ড হয়তো ঝামেলা চাচ্ছে না। নির্বিঘ্নে সিরিজ খেলাটা শেষ করতে চাচ্ছে। গ্যালারিতে বাংলাদেশের পতাকার স্রোতে পাকিস্তান পতাকার অস্তিত্ব যেন দৃশ্যমান না হয়, সেই ব্যবস্থা করা উচিত। কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মিরপুর স্টেডিয়ামে কিচ্ছু করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা যেত। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পন, বিজয়ের ঘটনাপ্রবাহ, স্বাধীনতার চলচ্চিত্র, মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গীত, এসব আয়োজন রাখাটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
মিরপুরে পতাকা উত্তোলনের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজার ইব্রাহিম বাদিজ। ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম চাঙ্গা করতেই এই রীতি চালু করেছেন পাকিস্তান কোচ সাকলাইন মুশতাক। বিশ্বকাপেও কয়েকটা ভেন্যুতে অনুশীলনেও এভাবেই পতাকা উড়িয়েছে দলটি। এ নিয়ে কথা উঠলেও সেভাবে বিষয়টা সামনে আসেনি।
আইসিসির ইভেন্ট আর দ্বিপক্ষীয় বাংলাদেশ সফরকে এক করে দেখার সুযোগ দেখছেন না আইনজীবী জয়ন্ত। বাংলাদেশে পতাকা উত্তোলন করতে হলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনেই সেটা করতে হবে, এই অভিমত তার।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/১৭/১১/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.