
বগুড়াঃ বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে নেয়ার ট্রলি ভাড়া (অবৈধ) চাহিদার চেয়ে কম দেয়ায় বিকাশ চন্দ্র (১৭) নামে এক স্কুলছাত্রের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের অনিয়মিত কর্মচারী আসাদুজ্জামান ধলু এ কাণ্ড ঘটায়। ঘটনার পর থেকে ধলু পলাতক। দাবিকৃত ভাড়ার ৫০ টাকা কম দিয়েছিল বিকাশের পরিবার। মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর বিকাশকে হাসপাতালে আনা হয়। বিকাশের মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুধবার ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই কর্মচারী ক্লিনার পদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুঁটিমারী এলাকার বিশু চন্দ্র কর্মকারের ছেলে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে। সোমবার রাত ৮টায় বাইসাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে সাঘাটায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয় বিকাশ। প্রথমে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাত ১০টার দিকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জরুরী বিভাগ থেকেই তাকে অক্সিজেন দেয়া শুরু হয়। জরুরী বিভাগ থেকে হাসপাতালের তিন তলায় নিউরো সার্জারি ইউনিটে নেয়ার জন্য ট্রলি আনা হয়।
এ সময় আসাদুজ্জামান ধলু ট্রলিতে বিকাশকে ওয়ার্ডে নেয়ার জন্য ২শ’ টাকা বকশিশ চায়। ওয়ার্ডে নিয়ে বিছানায় রাখার পর ওই কর্মচারী বিকাশের পিতা বিশু চন্দ্রের নিকট টাকা চাইলে তিনি ১৫০ টাকা দিয়ে জানান, তিনি গরিব তার নিকট আর টাকা নেই, কিন্তু ধলু বিষয়টি মানতে নারাজ। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বিকাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে ধলু। এর কিছু সময়ের মধ্যেই বিকাশ মারা যায়। বিশু জানান, তারা দরিদ্র, তার নিকট ১৫০ টাকাই ছিল। তিনি অনুনয় করেছিলেন। তার পরেও তার ছেলের মাস্ক খুলে নেয়া হয়। একারণেই তার ছেলে মারা যায়। ঘটনার পরই হাসপাতালের অন্য লোকজনসহ বিকাশের পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ি ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মহসীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান।
ঘটনার পর পরই ধলু পালিয়ে যায়। বুধবার হাসপাতাল পরিচালক জানান, বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যপারে তারা পুলিশ ও র্যাবকে জানিয়েছেন। ধলুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, বুধবার ঘটনা তদন্তে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মনির আলী আকন্দকে প্রধান করে ৪ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানিয়েছেন, বিকাশের পরিবার মামলা করতে অনীহা জানালেও তারা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/১১/১১/২০২১
Leave a Reply