ডিপ্লোমা পাস এমবিবিএস ডাক্তার তিনি

ঢাকাঃ উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবস্থাপত্রে নামের আগে বড় বড় ডিগ্রি, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রী না থাকলেও সকল রোগের চিকিৎসক মাঈনুল ইসলাম। নামের আগে পদবি লিখছেন ‘ডাক্তার’। ৬০০ টাকা ভিজিট নিয়ে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন সাধারণ রোগীদের। অথচ তিনি একজন ফিজিশিয়ান। বিপিটি (ব্যাচেলর অফ ফিজিথেরাপি), পিজিটি (স্পর্টস মেডিসিন), পিজিটি (অর্থোপেডিক মেডিসিন) ও এমডিটি (ব্যাক ও নিক পেইন) অর্থাৎ বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি কোর্স করেই এমবিবিএস চিকিৎসকের মতোই করছেন জটিল সব রোগের চিকিৎসা।

ডিজিটাল ব্যানার ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের নামে ভিজিটিং কার্ড ও প্যাড ছাপিয়ে আইন অমান্য করে চিকিৎসা সেবার নামে সাধারণ মানুষের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতারণা ব্যবসা। চিকিৎসা সেবার নামে প্রকাশ্যে প্রতারণা করলেও ডাক্তার রূপধারী এই ফিজিশিয়ানের ওপর নজর বা নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের। ফলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা গ্রামের সহজ সরল অসংখ্য মানুষ।

জানা যায়, বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি কোর্স করে নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখে রোগী দেখলেও এই ফিজিশিয়ানের রোগী দেখার আইনগত অনুমোদন বা যোগ্যতা কোনোটাই নেই। সাধারণ রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান এবং জটিল-স্পর্শকাতর রোগীদের বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে প্রেরণের নিয়ম থাকলেও তিনি করছেন ঠিক এর উল্টো। চিকিৎসার নামে সাধারণ-জটিল সকল রোগের অপচিকিৎসা দিয়ে চলেছেন তিনি। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে রোগকে আরো জটিল থেকে জটিলতর পর্যায়ে নিয়ে নিরাময়-অসম্ভব করে ফেলছেন। নিজেই চিকিৎসক সেজে রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের প্রেসক্রাইবও করছেন দেদারসে। নিজেকে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গ্রামের গরিব মানুষদের আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করছেন তিনি। প্রতারণা ব্যবসাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে মানিকগঞ্জে গড়ে তুলেছে পল্লীস্বাস্থ্য মেডিটেক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিজিশিয়ান মাঈনুল ইসলাম প্রায় এক যুগ আগে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের নারাঙ্গাই এলাকায় একটি বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে পল্লী স্বাস্থ্য মেডিটেক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি সেখানে রাতারাতি খোলে বসেন নার্সিং ইনস্টিটিউট।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, একজন ফিজিশিয়ানের অপচিকিৎসা, প্রেসক্রিপশনে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের নাম লেখার ফলে প্রতিনিয়তই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। প্রাথমিক অবস্থায় তারা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। সামান্য অসুখেও তারা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন জটিল রোগে। ফলে রোগ নিরাময়ে সময় বেশি লাগছে।

সিংগাইর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা লুৎফর রহমান জানান, দীর্ঘ দিন ধরে কোমর ব্যথায় ভোগছিলেন তিনি। মানিকগঞ্জে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে দালালদের খপ্পরে পড়ে ডাক্তার মাঈনুলের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। প্রেসক্রিপশনের পুরো পাতা ভরে ওষুধ আর ইনজেকশন লিখে আমার কাছ থেকে ৬০০ টাকা ভিজিট নেয়। ওই ওষুধ খাওয়ার পর থেকে আমার শরীর আগের মত আর চলে না।

এ ব্যাপারে মাঈনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার বিষয়ে কোন তথ্য জানার থাকলে সিভিল সার্জন জানতে পারেন। আপনাদের সাথে এ বিষয়ে কোন কথা বলবো না।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী লিখতে পারবে না। যদি তাহার বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন না থাকে তাহলে তিনি নামের আগে ডাক্তার পদবী লিখতে পারবে না। যদি তাহার বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন না থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০৮/১১/২০২১ 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.