
ময়মনসিংহঃ ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর দুঃখের অন্ত নাই। প্রাণ প্রকৃতির কান্না শোনার জন্য কোন প্রাণ আর অবশিষ্ট নাই। রূপালি স্বপ্নে চকচক করা তিস্তা চোখের সামনে মরুভূমি হলো, ব্রহ্মপুত্র আজ মৃত প্রায়। পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে বিপর্যয়ে মুখে জনপদ। COP-26 সম্মেলনেও আশাজাগানীয়া কোন ভবিষ্যত আমাদের ধরা দেয় নি। মানুষ নিজ হাতে ধ্বংস করছে নদ-নদী, বন, পাহাড় উজাড় করছে নির্বিচারে। তারপরও কিছু মানুষ কথা বলেন প্রকৃতির পক্ষে, কিছু মানুষ থেকেই যায় যারা সংখ্যায় বিপন্ন প্রায়, এই হাতেগুনা মানুষেরাই আমাদের স্বপ্নের ভিত গড়ে দেন, স্বপ্ন দেখার সাহস দেন।’
যৌথভাবে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’ ও ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’ (বেলা) আয়োজিত ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহের ‘সংকট ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তরা এ কথা বলেন।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে নদী ও প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধ মানুষেরা কথা বলেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে কবি ও শিল্পী কফিল আহমেদ নদীকে সম্পদ বলতে নারাজ। নদীকে সম্পদজ্ঞান করার জন্যই নদী আজ শুধুমাত্র উপযোগ হিসেবে মানুষের কাছে ব্যবহার্য। তাই নদ-নদী, প্রকৃতি আজ ধ্বংসের মুখে। তিনি উপস্থিতির উদ্যশ্যে বলেন আমাদের শুধুমাত্র পরিবেশবাদী না হয়ে প্রত্যেক মানুষকে পরিবেশ হতে হবে।
বেলা’র নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ব্রহ্মপুত্রের এই বেহাল দশার জন্য আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনীতিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন যখন আমরা দাবি করছি ব্রহ্মপুত্র আমাদের নদী, তখন ভারত বলছে ব্রহ্মপুত্র তাদের, চীন বলছে তাদের। ভারত যখন নদীর উপর বাঁধ দিয়েছে তখন তারা বাংলাদেশের কথা শুনেনি, ভাবেনি। আবার এখন যখন চীন বাঁধ দিচ্ছে তখন ভারত তাদের কান্না চীনাদের কানে দিতে পারছেনা। এক্ষেত্রে একে অপরের উপর শুধু অভিযোগ, দায় চাপাচ্ছে কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন, নদী আইনে এর কোন কার্যকরী সমাধান নেই।
বর্তামান ব্রহ্মপুত্র রক্ষায় গৃহিত ড্রেজিং কর্মসূচির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ড্রেজিং যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ড্রেজিংয়ের পর উত্তোলিত বালু কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে তাও গুরুত্বপূর্ণ। তার কি কোন সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা আমাদের কেমন আছে? নদীর বালু ড্রেজিং করার পর তা আবার নদীর তীরেই রাখছে যা পুনঃরায় নদীতেই পড়ছে। নিয়মিত ড্রেজিংয়ের পর কেন চড় জেগে উঠছে এ নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন এবং স্থানীয় উদ্যোক্তা ও জনগণকে সাথে নিয়ে এ ব্যপারে গণশুনানি ও প্রশ্ন তোলার প্রস্তাব জানান।
মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা বর্তামান ব্রহ্মপুত্রের সংকট ও ভবিষ্যত নিয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করেন। ব্রহ্মপুত্রের ইকোসিস্টেম ও মাছ ধ্বংসের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনাহীন সুইচ গেট কে দায়ী করেন অধ্যাপক অনুপ সাদী।
আলোচকরা খনন কাজে অসন্তষ প্রকাশ করে বলেন ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কি.মি. খননের ৫ বছর মেয়াদী যে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা এমনিতেই যথাযোগ্য হচ্ছেনা। অতীতের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, জলবায়ু মোকাবেলার ফান্ডের টাকা দিয়ে ডিসি অফিসের গেট নির্মান করা হয়েছে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে। খনন প্রকল্পের সাথে যদি ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী, উপনদী, খাল গুলো সংস্কার না করা হয় তাহলে তার খুব একটা উপকারীতা থাকবেনা। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মিলনস্থল, জামালপুর জেলার সন্নাসির চর এলাকার বালুর বাঁধ ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্থ করছে বলে উল্লেখ করেন।
মুক্ত আলোচনার পর গান পরিবেশন করেন প্রিতম শুভ ও তার দল।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০৬/১১/২০২১
Leave a Reply