
ময়মনসিংহঃ ‘ব্যথার দান’। এটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) একমাত্র মেডিকেল সেন্টারের নাম। নাম ‘ব্যথার দান’ হলেও মেডিকেল সেন্টারটিতে তেমন সেবা মেলে না। নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। সময়মতো চিকিৎসাসেবা তো মেলেই না, তার ওপর নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে চলে যান চিকিৎসকরা। সব চিকিৎসক আবার ঠিকমতো আসেন না। সব ওষুধপত্র বিনা খরচে দেয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। নেই রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা, ইসিজি কক্ষ ও প্যাথলজি ল্যাব। এতসব সমস্যা ও অভিযোগ নিয়ে চলছে চিকিৎসাকেন্দ্রটি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাসেবার কিছু নেই। সেন্টারে গিয়ে সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে চিকিৎসক চলে যান। নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। লিখে দেয়া বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। ডাক্তার ও স্টাফরা দায়িত্বশীল আচরণ করেন না।
শাহরিয়ার চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ব্যথার দানে গেলে বেশিরভাগ সময় হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। হয় চিকিৎসক থাকেন না, অথবা চিকিৎসক থাকলেও পর্যাপ্ত সেবা দেন না। সামান্য অসুস্থতাতেও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন না তারা। পাঠিয়ে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকার পরও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, বিষয়টা সত্যিই লজ্জাজনক।
জাককানইবির মেডিকেল সেন্টারে ‘সর্বরোগের মহৌষধ প্যারাসিটামল’- এ ধরনের একটি কথা প্রচলিত আছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে কোনো অসুস্থতায় প্যারাসিটামলই একমাত্র ওষুধ। অন্যান্য ওষুধ থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ডোজের ওষুধ মেলা ভার। সাত দিনের ওষুধ লিখে দিয়ে দু’দিনের ওষুধ দিয়েই খালাস তারা।’
সরজমিন দেখা গেছে, মেডিকেল সেন্টারে দায়িত্বরত চারজন ডাক্তারের মধ্যে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন মাত্র একজন। দুজন নার্সের মধ্যে নেই একজনও। প্রাথমিক চিকিৎসার কয়েকটি সরঞ্জাম থাকলেও নেই ইসিজি কক্ষ ও প্যাথলজি ল্যাব। আবার কিছু সরাঞ্জাম জনবলের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। পড়ে আছে রক্তমাখা গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা।
এ বিষয়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিজেদের তত্ত্বাবধানে বাইরে থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে এসে মাঝে মাঝে মেডিকেল সেন্টারটি পরিষ্কার করছি। অনেক সময় বাধ্য হয়ে রক্ত মাখা কাপড়, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা আমাদের নিজেদেরও পরিষ্কার করতে হয়।’
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্যাথলজি সেবা দেয়ার জন্য আমাদের কোনো টেকনোলজিস্ট নেই, নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি। এছাড়া আমাদের মেডিকেল সেন্টারটিতে নিয়ম অনুযায়ী চারজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকার কথা থাকলেও একজনও নেই। আমদের পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে শিক্ষার্থীদের হয়তো শতভাগ সার্ভিসটা দিতে পারি না। জনবল বাড়ানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অবহিত করেছি।’
ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার বলেন, ‘নতুন হল খোলা হলে প্রায় হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে। যে কোনো মুহূর্তে যে কারও সমস্যা হতে পারে। আমি চাই মেডিকেল সেন্টারটি যেন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি যেন এর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়।’
রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সামনে মেডিকেল সেন্টারকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টার ব্যথার দান-এ কিছুই করতে পারিনি। সদিচ্ছা ছিল, কিন্তু দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাবে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া পর্যাপ্ত চিকিৎসক নাই, নার্সও নাই। সর্বোপরি এটির অসহায় অবস্থা। এসব পদে জনবল নিয়োগের চেষ্টা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় সেগুলো সম্ভব হয়নি।’
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০৪/১১/২০২১
Leave a Reply