এবার আগেই নামছে শীত

ঢাকাঃ বদল হচ্ছে আবহাওয়ায়। বাতাসে পাওয়া যাচ্ছে শীতের আমেজ। সন্ধ্যার পর থেকেই কমে যাচ্ছে তাপমাত্রা। যেন প্রকৃতিতে ঘটছে শীতের আগমন। আবহাওয়াবিদরাও বলছেন, বাংলাদেশে এবার আগেভাগেই শীত নামবে। এ বছর নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আস্তে আস্তে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকবে।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বছরের মতো বিদায় নিয়েছে বর্ষা। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামেগঞ্জে শীতের সকালের মতো ঘাসের ডগায় শিশির জমছে। কোথাও কোথাও হাল্কা কুয়াশার সঙ্গে যেন উঁকি মারছে শীত। প্রকৃতিতে এখন এমনই ঋতুবদলের আয়োজন। দোকানিরা শীতের পোশাক ওঠাতে শুরু করেছেন। নগরের পথের ধারে দেখা মিলছে শীতের পিঠা-পুলির দোকানের। আবহাওয়াবিদরাও বলছেন, উত্তর দিকে হিমালয় অঞ্চল থেকে শীত নামানো হাওয়া ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে। ফলে নবেম্বরের মাঝামাঝিতেই দেশে শীত পড়তে শুরু করবে।

আমাদের দেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হিসেবে ধরা। তবে আপাতত কিছুদিন তাপমাত্রা কমা-বাড়ার মধ্যেই যাবে। তবে চলতি নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই তাপমাত্রা টানা কমে দেশজুড়ে শীত নামতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘দেশের উত্তর-পশ্চিমে একটা উচ্চ চাপ বলয় বিরাজমান করছে এখন। এই উচ্চ চাপ বলয় বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাষ্পকে দক্ষিণের দিকে ঠেলে দেবে। ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকবে। সেই তাপমাত্রাটা গড়ে ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠানামা করবে অঞ্চল ভেদে। সেই হিসেবে নবেম্বরে এই তাপমাত্রা থাকবে। যেটা শীতকালে সাধারণত গড় তাপমাত্রা থাকে।’

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন বাংলাদেশে চলছে হেমন্তকাল। বাংলা কার্তিক মাস। আগামী ১৫ নবেম্বর থেকে শুরু হবে অগ্রহায়ণ মাস। সাধারণত ডিসেম্বর মাস থেকে আমাদের দেশে শীতকাল শুরু হয়। কিন্তু তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত কারণে এবার ১৫ দিন আগে নবেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শীত শুরু হবে। তবে এবার শীতের প্রথম শৈত্যপ্রবাহটি ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই হবে। এটি হবে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে।

আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কমে গেছে। তীব্র এবং মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সময়সীমাটাও কমে আসছে। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ যেগুলো হচ্ছে, সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজ করছে। এসব শৈত্যপ্রবাহ দশ দিন থেকে শুরু করে একুশ দিন পর্যন্ত থাকছে।

উল্লেখ্য, আবহাওয়া অধিদফতরের ক্যাটাগরিতে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হচ্ছে-মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হচ্ছে-মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৪ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হচ্ছে-তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা হচ্ছে-অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবার রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোনা, যশোর, কুষ্টিয়া কখনও কখনও রাঙ্গামাটি অঞ্চলে এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হবে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ বলছেন, আপাতত তাপমাত্রার বড় ধরনের কোন পরিবর্তন হবে না। সামান্য বাড়বে, বেড়ে আবার কমবে। এভাবেই চলবে নবেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপটি ছিল সেটি এখন অনেক দূরে শ্রীলঙ্কার দিকে। সেটার কোন প্রভাব আর আমাদের এখানে পড়ছে না। এখন মৌসুমি স্বাভাবিক লঘুচাপ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। বর্তমানে বড় ধরনের কোন সিস্টেম আমাদের এখানে নেই, স্বাভাবিকই আছে। তাই নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমবে। তখনই শীত অনুভূত হবে। সেসময় ভোরের দিকে নদীতে ও উত্তরাঞ্চলে কুয়াশা থাকবে।’ আব্দুল হামিদ বলেন, ওয়েস্টারলি জেট স্ট্রিম (সাইবেরিয়া থেকে আসা হিম শীতল বাতাস) মূলত আমাদের দেশে শীত নামায়। সেটা এখনও আসেনি। নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর এই বাতাস আসতে শুরু করবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এটা ৫-৭ দিন আগে পরে হতে পারে। তবে এই ব্যবধানটাকে আমরা স্বাভাবিক হিসেবেই ধরি।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এখন থেকেই কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। ধীরে ধীরে শীতের দিকে এগিয়ে যাব আমরা। তবে এরমধ্যে মাঝে মাঝে তাপমাত্রা বাড়তেও পারে। বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ, জ্বলীয় বাষ্পসহ নানা কারণেই আমাদের আবহাওয়া বদলে যায়।

তবে তাপমাত্রা কমলেও শীতের আমেজকে তিনি শীতকাল বলতে নারাজ। তিনি বলেন, এখন সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে আমরা কিছুটা শীতের আমেজ পাচ্ছি। ভোরের দিকে দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচেও নেমে যাচ্ছে। তবে এখন আমরা এই আবহাওয়াকে শীতকাল বলতে পারি না। আনুষ্ঠানিকভাবে ডিসেম্বরে স্বাভাবিক সময়েই শীতকাল আসবে বাংলাদেশে। জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত এই শীতের অনুভূতি থাকে সাধারণত।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুসও একই মত ব্যক্ত করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের আবহাওয়ারও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তবে শীতকাল আগেই চলে আসবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। এখন আমরা শীতের আমেজ পাচ্ছি। তাপমাত্রাও সন্ধ্যার পর কমছে। ভোর পর্যন্ত এমন আবহাওয়া পাব আগামী এক মাসের মতো। তবে দিনের তাপমাত্রায় মাঝে মাঝে শীতের আমেজ থাকবে না। কারণ সূর্য এখনও আগের অবস্থানে আছে। শীতের সময় সূর্যের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। সেটি ডিসেম্বরের আগে ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না।

তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও ধীরে ধীরে কমছে তাপমাত্রা। তবে দেশে এখন রাতের তাপমাত্রা অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রাও কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ২ নবেম্বর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ৩ নবেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ৩ নমেম্বর তেঁতুলিয়ায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। একদিন আগে যা ছিল ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রী। তবে ২ নবেম্বর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল কক্সবাজারে ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, এর আগের দিন চট্টগ্রামে একই তাপমাত্রা ছিল।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০৪/১১/২০২১ 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.