
ময়মনসিংহঃ রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ১১ বছর পর পরিবার খুঁজে পেয়েছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার মরিয়ম। সাত বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মরিয়ম এখন ১৮ বছরের তরুণী। মেয়েকে ফিরে পেয়ে পরিবারটিতে বইছে এখন আনন্দের বন্যা।
মরিয়ম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউপির কান্দানিয়া গ্রামের মৃত আমছর আলী ও মোছা. বেগম দম্পতির মেয়ে।
জানা গেছে, মরিয়ম ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যায়। অভাবের সংসারে খরচ যোগাতে দুই বোন লাইলি ও সুফলা চাকরি করতেন গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে। ২০১০ সালে একদিন সেই বোনদের সঙ্গেই দেখা করতে গিয়েছিলেন মরিয়মসহ পরিবারের লোকজন। পরদিন সবাই মিলে বেড়াতে যায় মিরপুরের চিড়িয়াখানায়। সেখানে বাঘ-সিংহ দেখতে দেখতে একসময় বোনদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায় মরিয়ম। বোনদের খুঁজতে খুঁজতে সেখান থেকে বেড়িয়ে যায় সে। অন্যদিকে তারাও অনেক খোঁজাখুঁজি করে পায়নি মরিয়মকে।
হারানোর পর কয়েকবার হাত বদল হয়ে মরিয়ম সবশেষ আশ্রয় পায় সরকারি চাকরিজীবী মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও বাবেয়া আহমেদ দম্পতির বাসায়। দুই ছেলে-মেয়ে আর মরিয়মকে নিয়ে তারা থাকতেন রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। দীর্ঘ ১১ টি বছর নিজের মেয়ের মতই আদর-যত্নে তাকে বড় করেছেন তারা। তাই মরিয়মও নিজের পরিবার হিসেবে তাদেরকেই বুঝেন। তবুও মাঝেমধ্যে মনে পড়ে মা-বোনদের। যদিও মরিয়ম কখনো চিন্তাও করেনি আবারও ফিরতে পারবে মায়ের কাছে।
তবে আরজে কিবরিয়ার উপস্থাপনায় স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই মরিয়ম খুঁজে পেয়েছে তার পরিবারকে। গত ২৬ অক্টোবর রাতে আরজে কিবরিয়া পেজে প্রচারিত হয় মরিয়মের সাক্ষাৎকার প্রচারের পরপরই পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। রোববার পরিচয় নিশ্চিত হবার পর রাতেই মরিয়মকে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবার।
সোমবার কান্দানিয়া এলাকায় মরিয়মের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ির উঠানে বসে আছে মরিয়ম। তাকে ঘিরে বসে আছে বাড়ির লোকজনসহ আশেপাশের মানুষজন। মরিয়মকে দেখার জন্য পাড়াপ্রতিবেশি নারী-শিশুরা ছুটে আসছে বাড়িতে। মরিয়মও কথা বলছে সবার সাথে।
মোছা. মরিয়ম বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর আমি কয়েকজনের কাছে থেকেছি। তবে শেষে বর্তমান খালাম্মা-খালুর বাড়িতে ১১ বছর ধরে আছি। খালাম্মা ফেসবুকে ওই অনুষ্ঠানটা দেখতেন। সেজন্য আমার মনে থাকা কথাগুলো তিনি লিখে রেখেছেন এবং তিনিই আমাকে এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন।
মরিয়ম আরো বলেন, ‘ভিডিও করার পরও কখনো ভাবি নাই যে আমার পরিবারকে পাব এবং মায়ের কাছে ফিরতে পারবো। এখন ফিরতে পেয়ে আমার কেমন ভালো লাগছে তা বলে বুঝাতে পারবো না।’
হারানো মেয়েকে ফিরে পেয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে মা বেগমের। তিনি বলেন, হারানো মেয়েকে ফিরে পেতে অনেক কবিরাজের কাছে গিয়েছি, তাদের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি কিন্তু মেয়েকে পাই নি। অনেক কান্নাকাটি করেছি আর আল্লাহকে বলেছি মেয়েকে না দেখিয়ে আমার মৃত্যু দিও না। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে ভিডিও ছাড়ার পরে আল্লাহর রহমতে আমরা তাকে ফিরে পেয়েছি।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০১/১১/২০২১
Leave a Reply