
ঢাকাঃ জলদস্যুমুক্ত সুন্দরবন তিন বছরে পা দিয়েছে। একসময় সুন্দরবনের উপকূলে তাণ্ডব ছিলো জলদস্যুদের। আশির দশক থেকে জলদস্যু ও বনদস্যুদের আক্রমণ শুরু হয়। পরে র্যাবের অভিযানে আত্মসমর্পণ করে জলদস্যুরা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন।
দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার (০১ নভেম্বর) বাগেরহাটের রামপালে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু পুনর্বাসন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে ঘর, মুদি দোকান (মালামালসহ), জাল, মাছ ধরার নৌকা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও গবাদিপশু উপহার দিবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
র্যাব জানায়, আত্মসমর্পণ পরবর্তী পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাবেক জলদস্যুদের প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া, সরকার কর্তৃক আইনি সহায়তা ও র্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সুন্দরবনের সকল জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। সম্প্রতি র্যাব পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের মধ্যে ঘর, দোকান, নৌকা, জাল ও গবাদি পশু হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। যা তাদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের মোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেন। এই কারণে সম্পূর্ণভাবে জলদস্যু মুক্ত হয় সুন্দরবন।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এরপর থেকে বনদস্যু ও জলদস্যু মুক্ত করতে প্রক্রিয়া শুরু করে র্যাব। ২০১২ সাল থেকে র্যাবের জোরালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বনের গহীনে থাকা জলদস্যুরা। র্যাবের তৎপরতায় দস্যু বাহিনীগুলো ফেরারি জীবন শুরু করে। এরপর দস্যুতার অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়।
ডাকাতি, অপহরণ ও হত্যাসহ নানা তাণ্ডব চালায় একাধিক দস্যু বাহিনী। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন উপকূলের বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের এই জিম্মি দসা থেকে বের করে আনতে র্যাবের তৎপরতায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
আত্মসমর্পণ করা দস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে- মাস্টার বাহিনীর ১০ জন, মজনু বাহিনীর নয়জন, ইলিয়াস বাহিনীর দুইজন, শান্ত বাহিনীর ১৪ জন, আলম বাহিনী ও সাগর বাহিনীর ১৩ জন, খোকাবাবু বাহিনীর ১২ জন, নোয়া বাহিনীর ১২ জন, জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০ জন, ছোট রাজু বাহিনীর ১৫ জন, আলিফ বাহিনী ও কবিরাজ বাহিনীর ২৫ জন, মানজু বাহিনীর ১১ জন, মজিদ বাহিনী নয়জন, বড় ভাই বাহিনীর ১৮ জন, ভাই ভাই বাহিনীর আটজন, সুমন বাহিনীর ১২ জন, ডন বাহিনীর ১০ জন, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর নয়জন, ছোট সুমন বাহিনীর আটজন, দাদা ভাই বাহিনীর ১৫ জন, হান্নান বাহিনীর নয়জন, আমির আলী বাহিনীর সাতজন, সুর্য্য বাহিনীর ১০ জন, ছোট সামসু বাহিনীর নয়জন, মুন্না বাহিনীর সাতজন, আনোয়ারুল বাহিনীর আটজন, তইবুর বাহিনীর পাঁচজন, সিদ্দিক বাহিনীর সাতজন, আলামিন বাহিনীর পাঁচজন, সাত্তার বাহিনীর ১২ জন এবং শরীফ বাহিনীর ১৭ জন। তারা সবাই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
এ বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, একটা জিনিস অর্জন করার চেয়েও ধরে রাখা অনেক বেশি কঠিন। জলদস্যু মুক্ত সুন্দরবন ধরে রাখার জন্য সুন্দরবনের দুবলার চর ও সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জে আমরা দুটি ক্যাম্প স্থাপন করেছি। নিয়মিত ফুটপ্যাট্রল, নৌ প্যাট্রল করছি। প্রয়োজনে হেলিকপ্টর টহল দিচ্ছি। গোয়েন্দা নজরদারি রাখছি। যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদেরও আমরা মনিটরিং করছি।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০১/১১/২০২১দস্যুমুক্ত সুন্দরবন তিন বছরে পা দিয়েছে
Leave a Reply