
গাইবান্ধাঃ জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বাদীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় গ্রামবাসীর হাতে আটক সেই এএসআইকে প্রত্যাহারের পর লাঞ্ছিত ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে ৯০ জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি রবিবার রাতে নিশ্চিত করেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহিল জামান।
মামলার ঘটনা ও ১৩ জনের গ্রেপ্তারের বিষয় জানাজানি হলে উত্তর ধর্মপুর (ছড়ার কুঠি) গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে ওই গ্রামের পুরুষ মানুষগুলো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর ইউনিয়নের উত্তর ধর্মপুর (ছড়ারপাতা) গ্রামের আবদুল খালেক, আমজাদ আলী, সুমন মিয়া, বকুল মিয়া, মুকুল মিয়া, জহুরুল ইসলাম, শাহজাহান আলী, আবদুর রাজ্জাক, হামিদুল ইসলাস, রবিউল ইসলাম, নাজমুল হক ও রাজু মিয়া। অপরজনের নাম জানা যায়নি।
পুলিশের মামলার এজাহারে বলা হয়, ধর্মপুর (ছড়ারপাতা) গ্রামের এক মামলার বাদীর গাছ জোর করে কেটে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এএসআই তোফাজ্জল হোসেন সাদা পোশাকে তার বাড়িতে যান। পরে বাদীর অভিযোগ শুনে আসার সময় ওই নারীর ভাসুর মাসুদ মিয়া তোফাজ্জলকে গালমন্দ করেন। এরপর চিৎকার করে গ্রামবাসীকে জড়ো করে তোফাজ্জলকে আটক করে উঠানের আম গাছে বেঁধে ফেলেন।
এরপর মাসুদসহ কয়েকজন তোফাজ্জলকে বেধড়ক মারপিট করেন। তা ছাড়া তার পকেটা থাকা নগদ টাকা ও হাতঘড়ি লুট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে যায়। পরে উত্তেজিত মানুষ তাদের উপরও হামলার প্রস্তুতি নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তোফাজ্জলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তোফাজ্জল হোসেনকে প্রত্যাহার করে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করে বাহিনীটি। এ ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার গুজব, মারপিট ও অর্থ ছিনিয়ে নেয়াসহ সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ২০ জনের নাম ছাড়াও গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়।
এএসআই তোফাজ্জল হোসেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত। কিছুদিন আগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর ধর্মপুর ছড়ারপাতা গ্রামের ওই নারীর সৌদি প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে জমিজমা নিয়ে ভাসুরের বিরোধ দেখা দেয়। পরে ওই নারী বাদী হয়ে থানায় ভাসুরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তভার পড়ে সহকারী উপ-পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেনের উপর। পরে তদন্তে গিয়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন তোফাজ্জল হোসেন। তিনি মামলার অজুহাতে ওই নারীর সঙ্গে প্রায়ই রাতে দেখা করতে আসেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তোফাজ্জল হোসেন ছড়ারকুঠি গ্রামের ওই সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে আসেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির গোয়ালঘরে আপত্তিকর অবস্থায় ওই নারীর সঙ্গে তোফাজ্জল হোসেনকে দেখে ফেলেন প্রতিবেশীরা। এ ঘটনা জানাজানি হলে শত শত উত্তেজিত জনতা তোফাজ্জলসহ প্রবাসীর স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে তাদের বাড়ির উঠানের আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে খবর দেয়া হয় পুলিশে। সুন্দরগঞ্জ থানা ও কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। তারা বাঁশি বাজিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে জনগণকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওই প্রবাসীর বাড়ি থেকে টিনের বেড়া ভেঙে তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তোফাজ্জল হোসেনকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ৩০ অক্টোবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তোফাজ্জলকে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/০১/১১/২০২১
Leave a Reply