স্বাস্থ্য খারাপ ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের, চিকিৎসা জরুরী

ময়মনসিংহঃ জেলার ত্রিশাল উপজেলার সাড়ে ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একমাত্র জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। রোগীরা পাচ্ছেন না অ্যাম্বুলেন্স সেবা। হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ছয় মাস ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পড়েছে। অরক্ষিত অবস্থায় প্রবেশ করছে গরু-ছাগল। রাতের অবস্থা আরও বেহাল। বিদ্যুৎ চলে গেলেই হাসপাতালে ভুতুড়ে অবস্থা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড অপরিষ্কার, বাথরুমের দরজা নেই। দুর্গন্ধ ও অপরিষ্কার হয়ে পড়ে থাকায় রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রসূতি ওয়ার্ডের অস্ত্রোপচার কক্ষের যন্ত্রাংশ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকের অভাবে হয় না অস্ত্রোপচার। প্রসব-পরবর্তী কক্ষে নেই বাতি ও ফ্যান। হাসপাতালে জেনারেটর থাকলেও তা পড়ে আছে অচল অবস্থায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন। অন্যদিকে সেবা ঠিকমতো না মিললেও হাসপাতালের টিকেট ফি ৩ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পড়ে আছে বহুদিন। অরক্ষিত অবস্থায় হাসপাতালে রাতের অন্ধকারে বসে নেশার আড্ডা। হাসপাতালের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে নেশাখোরদের আনাগোনা থাকলেও নেই কোনো প্রতিকার। হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন অনেক বছর ধরে নষ্ট থাকায় বাড়তি টাকা খরচ করে চিকিৎসকদের পছন্দের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হচ্ছে। একটি এক্সরে মেশিন থাকলেও তা অনেক পুরানো। ইসিজির অবস্থা একই রকম।

ভুক্তভোগী নওপাড়া গ্রামের মামুন তালুকদার অভিযোগ করেন, হাসপাতালটির পরিবেশ নোংরা আর বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকার নেমে আসে। ওষুধ কোম্পানির লোকজন সব সময় চিকিৎসকদের ঘিরে থাকেন। এ কারণে চিকিৎসকরা ঠিকমতো রোগী দেখতে পারেন না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব রিপ্রেজেন্টেটিভের দখলে থাকে পুরো হাসপাতাল।

টিকেটের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি মূল্য ৩ টাকা। কিন্তু আমরা অনেকদিন ধরে ৫ টাকা করে নিচ্ছি। কর্তৃপক্ষ নিতে বলছে তাই ৫ টাকা নেই। এই প্রতিবেদকের সামনেই এক রোগীর কাছ থেকে ১০ টাকা নেওয়া হয়েছেÑ এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভুলে নেওয়া হয়েছে। ফেরত দিয়ে দেব।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এতদিন শল্যচিকিৎসক ও অ্যানেস্থেসিস্ট ছিলেন না। তাই অস্ত্রোপচার বন্ধ ছিল। কয়েকদিন হলো চিকিৎসক এসেছেন। এখন দ্রুতই প্রসূতি ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু হবে। এ ওয়ার্ডে কিছু জিনিসের স্বল্পতা রয়েছে, তাও সমাধান হয়ে যাবে।

উপজেলো স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের জেনারেটর নষ্ট অনেক দিন। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীদের সমস্যা হয়। তাই আইপিএসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আল্ট্রা মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় বাইরে থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থানীয় এমপির ডিউ লেটার নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেটি আমাদের হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু দেওয়া হয়েছে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। শিগগিরই আমাদেরটাও চলে আসবে।

টিকেটের বাড়তি মূল্য নেওয়া প্রসঙ্গে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, রোগীর ফি সরকারিভাবে ৩ টাকা। অনেক বছর ধরে ৫ টাকা নেওয়া হয়। এটি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটিই নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতিরিক্ত ২ টাকা হাসপাতালের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে। ব্যাংকে তা জমা আছে।

সরকারিভাবে কোয়ার্টার ভবনগুলোকে এখনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অব্যবহৃত ভবনে নেশার আড্ডা জমে, তা দেখে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খবর সময়ের আলোর।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/৩১/১১/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.