মাত্র ২৫ টাকাতেই জামাই আদরে মিলছে ভরপেট খাবার

নাটোরঃ মাত্র ২৫ টাকাতেই জামাই আদরে মিলছে পেটপুড়ে খাওয়ার সুযোগ। তবে মাংস ভাত খেতে লাগবে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। জেলার গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় হাটে হোটেল জামাই হাটায় ১৩টি খাবার দোকানে এ সুযোগ মিলছে ৪৫ বছর ধরে।

চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল শ্রমজীবি, মধ্যবিত্ত-নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এসব হোটেলগুলোর খদ্দের। ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হোটেলগুলো খোলা থাকে। পজিসন ভাড়া-দামী আসবাবপত্র ও অধিক কর্মচারি লাগেনা বলে কমদামে খাবার খেতে পারেন মানুষ।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গুরুদাসপুর পৌরসভার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নন্দকুঁজা নদীর তীরে চাঁচকৈড় হাটে গরু- রসুন, পেঁয়াজ আর ধানসহ নানা পণ্য বেচাবিক্রিকে ঘিরে বসেছে স্বল্প দামের এই খাবার দোকান। বাঁশপুঁতে ওপরে ও চারপাশে মোটা পলিথিন দিয়ে ঘেরা। বসার জন্য টেবিল-বেঞ্চ। রান্না করা খাবার গরম রাখতে তরকারির পাত্রগুলো রাখা হয়েছে কয়লার আগুনের ওপর। খদ্দেররা দল বেঁধে খাচ্ছে তাঁদের চাহিদামত খাবার।

দোকানীরা জানান,- দেড় প্লেট পরিমান ভাতসহ একটি রান্না ডিম দিয়ে ভাত খেতে লাগে ২৫ টাকা, সিলভাকার্প, নলা, রুই, মিরকা মাছের একপিচ মাছ-ভাতসহ ৩০ টাকা, গরু-মহিষের ভুড়ি(বট) ২৫টাকা, ৪-৫টুকরা গরু/মহিষ মাংসসহ দেড় প্লেটভাত ৬০ থেকে ১০০ টাকা করে লাগে।

হোটেল জামাই হাটায় অন্তঃপক্ষে দশজন ভোক্তার সাথে কথাবলে জানা গেছে, দামী হোটেল রেষ্টুরেন্টে একটা রান্না করা ডিমসহ দেড় প্লেট ভাত খেতে লাগে ৪০ টাকা, মাংস দিয়ে খেতে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। অবস্থা বিবেচনা করে তারা স্বল্পদামের হোটেলে খাচ্ছেন। এসব ভোক্তারা গুরুদাসপুরসহ আশপাশের বড়াইগ্রাম, সিংড়া, চাটমোহর, তাড়াশ, সলঙ্গা, রায়গঞ্জ, উল্লাহপাড়া উপজেলার এলাকা থেকে চাঁচকৈড় হাটে এসেছেন।

হোটেল জামাই হাটার দোকানদার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, মোঃ মজিদ, মোঃ খবির ও আব্দুল মালেক জানান, সপ্তাহে দুইটি হাট (শনি-মঙ্গল) বসে। একজন হোটেল মালিক প্রতিহাটে ৫০ থেকে ৮০কেজি চালের ভাত বিক্রি করেন। তরকারিতে লাভ না হলেও-ভাত বিক্রিতে লাভ হয় বেশি। গড়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তবে বর্ষাকালে নৌচলাচল সচল থাকে এজন্য বেচা-বিক্রি বাড়ে। এসব হোটেল চালাতে তেমন পুঁজি লাগেনা। ডিম,মাছ, মাংস, চাল,খড়ি, মসলা বাঁকিতে কিনে বিক্রির পর টাকা পরিশোধ করতে হয় দোকানিদের। প্রতি হাটে খরচবাদে দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হয়। চাঁচকৈড় হাট ছাড়াও উপজেলার নাজিরপুর, তাড়াশের নওগাঁ ও বগুড়ারর নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর হাটে- তাঁরা নিয়মিত খাবার হোটেল বসান। খাবার পরিবেশনকারিসহ তিনজন লোক দরকার হয় হোটেল চালাতে। শ্রমিকদের ৪০০ থেকে ৫০০টাকা করে মজুরি দিতে হয়।

কবে, কখন থেকে ভ্রাম্যমান এই হোটেল রেওয়াজ চালু হয়েছিল-তার সঠিক ইতিহাস জানাতে পারেননি এসব দোকানিরা। তবে দোকানদার জাহিদুল ইসলামের মতে, তাঁর বাবা আবুল হোসেন ৪৫ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ২৪ বছর ধরে তারা তিনভাই পৃথক ভাবে এই ব্যবসা করছেন। জমিজমা না থাকায় এই আয়েই তাদের মত ১৩জন ব্যবসায়ীর সংসার চলছে। অপর দোকানদার খবির হোসেন জানান, এক সময় চলনবিল অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। বর্ষায় নৌকা আর পায়ে হেঁটে কিংবা গরু মহিষের গাড়িতে হাটে পণ্য পরিবহনসহ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে আসতো মানুষা। পিছিয়ে পড়া সভ্যতার কারনে বর্তমান সময়েরমত ভালো হোটেল-রেষ্টুরেন্ট চালু ছিল না। সময়ের প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান এসব হোটেল চালু হয়েছিল।

হোটেল জামাই হাটা প্রসঙ্গে এসব দোকানিরা জানান, ‘শ্বশুর বাড়িতে গেলে অন্তপক্ষে ২০০টাকার এক কেজি মিষ্টি নিয়ে যেতে হয়- তবেই জামাই আদর মেলে, কিন্তু মাত্র ২৫ টাকা খরচ করে তাদের হোটেলে বসলে- পেটপুড়ে আপ্যায়ন মেলে’ এ কারনে হোটেল জামাই হাটা নাম হয়েছে।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/৩১/১১/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.