বেড়েছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার থাবা

ঢাকাঃ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার থাবা বেড়েছে। নদ-নদীর এই অববাহিকা ভারতের বিশাল এলাকাজুড়ে। যার পাদদেশে বা ভাটিতে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিরাট এলাকা। গত ক’বছরে দেশে বন্যার তাণ্ডব বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতি। বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা বিশ বছর আগের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বায়নে দুর্গতদের এই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া ম্যাপিং জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু গবেষণার একদল বিজ্ঞানী এসব কথা বলেছেন। যেখানে ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের জলবায়ু ও বন্যার তথ্য নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ^খ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ এই অক্টোবরে প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনের মূল গবেষক ছিলেন এ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. বিথ টেলম্যান। সঙ্গে ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টোরাল সায়েন্টিস্ট ড. জোনাথন সুলিভান। সহযোগী ছিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়। আউটরিচ হিসাবে যুক্ত ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এবং গুগল আর্থ।

আজ (৩১ অক্টোবর) স্কটল্যান্ডের বঙ্গোপসাগরে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬। বিশ্বের দৃষ্টি এই সম্মেলনে। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ তিন এজেন্ডা উপস্থাপন করবে এই সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন একই সঙ্গে। সূত্রমতে, এই সম্মেলনে কোন এক অধিবেশনে বিশ্বের জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা বন্যার বিষয়টি থাকবে।

বিশ্বের বন্যা বিষয়ক গবেষণা প্রতিবদেনে বলা হয়, প্রায় ৯০ শতাংশ বন্যার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেকং অববাহিকা পড়েছে এই এলাকায়। এই অববাহিকায় বাস করে বেশি মানুষ। যেখানে জনঘনত্ব বেশি। যার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের বাস বাংলাদেশ ও ভারতে। বাংলাদেশে নিত্যবছর ছোবল দেয় বন্যা। ভারতের উত্তর-পূর্বাংশে বন্যা দেখা দেয়ার ক’দিনের মধ্যে ঢলের পানি নেমে আসে বাংলাদেশে। ভাসিয়ে দেয় বিশাল এলাকা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে দুর্ভোগ আরও বেড়ে ভয়াল রূপ নেয়। চলতি বছর বাংলাদেশে একদফা বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই উজানের ঢলের পানিতে অক্টোবরের মধ্যভাগে ফের বন্যা দেখা দেয় দেশের উত্তরাঞ্চলের চার জেলায়। এই ঢল গড়িয়ে যায় পূর্বাঞ্চলে। অতীতে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বন্যা আঘাত করত। বর্তমানে তা পাল্টেছে। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে জলবায়ুর নিত্য পরিবর্তনকে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে গত ১৮ বছরে (২০১৮ সাল পর্যন্ত) প্রতিবছর গড়ে ৮ লাখ ৬১ হাজার বর্গমাইল এলাকা প্লাবিত হয়। অন্তত ২৯ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবেদনে শঙ্কার পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ছাড়াও ইউরোপেও বন্যাঝুঁকি ধেয়ে আসছে। গত দু’মাসে কয়েকটি দেশে আকষ্মিক বন্যায় তা স্পষ্ট হয়েছে। এই সময়ে ইউরোপের দেশ ছাড়াও চীন ও ভারতে বন্যা দেখা দেয়। যার ধাক্কা সামলাতে হয় বাংলাদেশকেও। ওই বন্যা একাধিক জায়গায় মারাত্মক রূপ নেয়। এ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে হবে নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলোকে।

গবেষকগণ বলেন, দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আবার অন্য কোন সুযোগ না থাকায় এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে ওই দুর্যোগপ্রবণ এলাকায়ই বসবাস করতে হচ্ছে। বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে বন্যার ভয়াল থাবায় মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে যায় বসতভিটা ফেলে। নদী ভাঙ্গনে বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেলে তারা ভিনগ্রামে ও কোন চরে আবাস গড়ে তোলে। কেউ কোথাও যেতে না পারলে বাঁধে আশ্রয় নিয়ে থাকে। অপেক্ষায় থাকে কখন চর জেগে আবাস ফিরে দেবে নদী। প্রতিবেদকের গবেষক ও মূল লেখকগণ বলেন, তাদের প্রতিবেদন নীতিনির্ধারকদের কাজে লাগবে।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/৩১/১১/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.