
ঢাকাঃ কোরেক্স, এসকাফ, এমকে ডিল, কোডিন, কোডোকফ ভিন্ন নাম হলেও এগুলো মাদকদ্রব্য। ফেনসিডিলের বিকল্প নামে সীমান্ত এলাকায় দিয়ে এগুলো দেশে আনছে মাদক কারবারিরা। কারণ অতি পরিচিত হওয়ায় ফেনসিডিলের উপাদান দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে এখন এসব মাদক তৈরি করা হচ্ছে।
গত বুধবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মহাপরিচালক পর্যায়ে সপ্তম দ্বিপাক্ষিক সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ভারতকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, মাদক হিসেবে দেশে ইয়াবার পরেই চাহিদা ফেনসিডিলের। এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই ‘সুযোগ’ কাজে লাগিয়ে ভারতের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ কারখানা। আর নাম পাল্টিয়ে অন্য নামে দেশে ঢুকছে মাদকটি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ভারতকে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণসহ এবারের সম্মেলনে মাদকের অনেক বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, ভারত থেকে প্রতিনিয়ত ফেনসিডিল আসছে। কোরেক্স, এস্কাফ, এমকে ডিল (কোডিন ফসফেট) এবং কোডোকফ নামে ফেনসিডিল জাতীয় এই মাদক আসছে। প্লাস্টিক ও কাচের বোতলে এসব মাদক পাচার করা হয়।
বাংলাদেশের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর দিকের সীমান্ত এলাকা দিয়ে এই ফেনসিডিল চোরাকারবারিরা পাচার করে। বোতল ছাড়াও পলিথিন, ড্রামে করেও কোডিন দেশে আনা হয়। চোরাচালানের মাধ্যমে আনা এই মাদক দেশে এনে বোতলজাত করেও একটি চক্র মাদকসেবীদের হাতে তুলে দেয়। ভারতের সীমান্ত এলাকায় এ রকম কিছু কারখানা আছে, যেখানে ফেনসিডিল উৎপাদনের প্রধান উপাদান কোডিন মজুত ও ফেনসিডিল জাতীয় মাদক তৈরি করে বাংলাদেশে পাচার করা হয়। এসব অবৈধ কারখানা ধ্বংস করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
বাড়ছে হেরোইন পাচার: ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে হেরোইন পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্ধার হওয়া হেরোইন চালান থেকে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়াও ভারত থেকে বিভিন্ন অবৈধ ইনজেকশন প্রবেশ করছে। জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এসব ইনজেকশন পাচার করা হয়। শুধু তাই নয়, গাঁজা পাচারের জন্য চোরাকারবারিরা নতুন নতুন রুট সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে গাঁজা পাচার করা হচ্ছে।
আর ইয়াবা পাচারে ভারতের রুটও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতে যেসব ইয়াবা মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে, তা মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিম বাংলার রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে এসব ইয়াবা প্রবেশের চেষ্টা করে মাদক কারবারিরা। ভারতকে এ বিষয়ে আরো তৎপর হয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
মাদকের কেনাবেচা ভার্চুয়াল মুদ্রায় : বর্তমানে মাদক চোরাকারবারিরা মাদক পাচার ও কেনাবেচায় তাদের ধরন পরিবর্তন করেছে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ দাবি করেছে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভুয়া ব্যক্তির ঠিকানায় মাদকপাচার হচ্ছে। এসব মাদক কেনাবেচার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। যা দুই দেশেই অবৈধ মুদ্রা। এতে অর্থপাচার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশই একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এছাড়াও হুন্ডির মাধ্যমেও তারা মাদকের টাকা পাচার করে।
মাদক প্রতিরোধে ত্রিপক্ষীয় সভা চায় বাংলাদেশ: বাংলাদেশ কোনো মাদকের উৎপাদন করে না, তারপরও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। মিয়ানমার থেকে যেমন ইয়াবা ও আইস আসে, তেমনি ভারত থেকে আসে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইনজেকশনসহ বিভিন্ন মাদক। তাই এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ত্রিপক্ষীয় সভার প্রয়োজনের কথা বাংলাদেশ ভারতকে বলেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বলা হয়েছে, ‘সুশাসন ও নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সভা করলে অনেক কিছুরই সমাধান হবে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘আমরা ষষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সভায় ভারতকে কিছু বিষয়ে তথ্য দিয়েছিলাম, কিছু ফেনসিডিল উৎপাদনকারীর নাম-ঠিকানা দিয়েছিলাম, সেগুলো ভারত ধ্বংস করেছে। আমরা আবারো কিছু বিষয়ে তাদের জানিয়েছি, দুই দেশই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ জন্য তথ্য আদান-প্রদান, অভিজ্ঞতা শেয়ার, নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছি।’ খবর বাংলাদেশের খবরের।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/৩০/১১/২০২১
Leave a Reply