
গোপালগঞ্জঃ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীনতার ৪০ বছর পর জামাত নেতা কর্তৃক হত্যার শিকার হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও বিচার মেলেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ফকির হত্যাকাণ্ডের। বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী হত্যার বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে থাকলেও বিচার পাওয়ার আশার হাল ছাড়েননি স্ত্রী জাহানার বেগম। জামাত নেতা কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতা হত্যার বিচারের জন্য মামলা লড়ছে তার মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা জোনাকি বেগম। ঘটনাটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মোচনা ইউনিয়নের আইকদিয়া গ্রামের।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২২ জুলাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ফকির তার নিজস্ব জমি থেকে মাটি কেটে বসতভিটার জমি ভড়াট করার প্রস্তুতিকালে একই গ্রামের বাসিন্দা জামাত নেতা (ইউনিয়ন ও জেলা পর্যায়ের) ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইমারত হোসেন মোল্লা, লুতফর মোল্যা (সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী)ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বাধা প্রদান করেন। তাদের এই বাধার প্রতিবাদ করলে পাশের একটি পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে মারতে এক পর্যায়ে গামছা পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনার পর একই দিনে মকসুদপুর থানায় স্ত্রী জাহানার বেগম বাদী হয়ে জামাত নেতা ইমারত হোসেন মোল্লাকে প্রধান আসামী করে লুৎফর হোসেন মোল্লা (সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) ও আরিফ মোল্লা (ঘটনার পর থেকে পলাতক বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছেন) , সামচুদ্দিন মোল্যা ও উসমান মোল্যা কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১০ বছরেও ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ন্যায় বিচার পায় নাই। ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আদালত এর দিক মুখিয়ে তাকিয়ে আছে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।

ভুক্তোভুগি মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসামী পক্ষ এলাকার প্রভাবশালী ও বিত্তশালী হওয়ায় বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলায় জামাতের সাবেক নেতারা ক্ষমতাশালী আর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার অসহায় এটা বড়ই কষ্ঠদায়ক। তারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে প্রভাব খাটিয়ে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।
এ বিষয় বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে (বর্তমানে মামলার বাদী) স্কুল শিক্ষিকা জোনাকি বেগম আমাদের বাণী’কে বলেন, সেই ২০১১ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাবা হত্যার বিচারের আশায় মামলা লড়ছে। দশ বছর পার হয়ে গেলে তবুও মামলার রায় হয়নি। আমাদের কোন ভাই নেই শুধু তিন বোন। একজন স্কুল শিক্ষিকা এবং নারী হয়ে মামলা চালানো যে কতটা কঠিন তা আপনাকে বোঝাতে পারব না। মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আছে তবুও আসামীরা জামিনে থাকে। আমি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার পরে একবার তারা আটক হয়েছিল পরে আবার জামিনে আছে। মামলার সাক্ষী শেষ শুধু রায়ের অপেক্ষা অথচ তারা সাফাই সাক্ষীর কথা বলে শুধু কালক্ষেপণ করছে। এখন এই মামলা হাইকোর্টে নিয়ে গেছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ফজলুল হক খোকন বলেন, মামলার সাক্ষী শেষ। এখন রায়ের পালা। আসামী পক্ষ এখানে কোন সুবিধা করতে না পেরে তারা হাইকোর্টে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আছে তারা সাক্ষ্যও দিয়েছে। আশা করি অচিরেই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার যুগান্তরকারী রায় ঘোষণা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মকসুদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফিরোজ খান আমাদের বাণী’কে বলেন, এই বাংলা মাটিতে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা হত্যাকান্ড আসলেই ন্যাক্কারজনক।
তিনি আরও বলেন, আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ফকিরের হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে আমার নেতৃত্বে মকসুদপুরে মুক্তিযোদ্ধারা মিলে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলাম। দীর্ঘদিন পার হওয়ায় মামলার রায় হয়েছে কি না আমার জানা নেই। রায় হয়নি জানালে তিনিএকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচারের এতটা লম্বা সময় হওয়ায় আক্ষেপ করে বলেন, এটা কাম্য নয় আমরা চাই দ্রুত বিচার হোক।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/৩১/১১/২০২১
Leave a Reply