ফেসবুক নিজেই জানে না তার ব্যবহারকারীর প্রকৃত সংখ্যা

বিশ্বের বৃহত্তম টেক জায়ান্ট হিসেবে বিগত মাস জুড়ে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করছে ফেসবুক। গেল মাসে সারা বিশ্বে ফেসবুক ডাউন হওয়া, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে সমস্যা হওয়া এবং সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে জায়ান্ট ফেসবুকের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ব জুড়ে। ব্রিটেনে আদালতের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এবার নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ফেসবুকের আসল ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, মোট ফেসবুক ইউজারের তথ্য থাকলেও আসলে কতজন ইউনিক ইউজার ফেসবুক ব্যবহার করছে তার সঠিক ডাটা নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, একই ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাই কতগুলো প্রকৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তা সুনির্দিষ্ট করে জানে না প্রতিষ্ঠানটি।

মার্কিন দৈনিক ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে বলা হয়, ব্যবহারকারীদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে বেশ জটিলতায় পড়তে হচ্ছে ফেসবুককে। ব্যবহারকারীদের অনেকেরই একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকায়, এদের মধ্যে কোন অ্যাকাউন্টগুলোকে নিয়মিত ব্যবহারকারী হিসেবে গণনা করা হবে বা কতজনকে নিয়মিত ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, সেই প্রশ্নে বিভ্রান্ত প্রতিষ্ঠানটি নিজেই।
এর থেকেও বিস্ফোরক তথ্য হলো, প্লাটফর্মটিতে নতুন যে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে তার মধ্যে পুরনো ব্যবহারকারীদের নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ঘটনা ‘বেশ লক্ষণীয়’।

পাঁচ হাজার নতুন সাইন আপ বিশ্লেষণ করে ফেসবুক আবিষ্কার করে- এর মধ্যে ৩২ থেকে ৫৬ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মালিকের আগে থেকেই ভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে! ফেসবুকের নিজস্ব অনুসন্ধানেই উঠে এসেছে নিয়মিত ব্যবহারকারীদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে আরও চমকপ্রদ তথ্য। মে মাসে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ এক মেমোতে দেখা গেছে, বয়স ২০-এর ঘরে কিন্তু মাসে একবার হলেও ফেসবুকে ঢুকেন এমন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা অনেক সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই বয়সসীমার নাগরিকদের মোট সংখ্যার থেকে বেশি! অর্থাৎ ফেসবুকে দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যাটি ‘নির্ভরযোগ্য’ নয় বলা হয়েছে ওই মেমোতেই।

ফেসবুকের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে ফেসবুকের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতাদের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে তার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে এক ফেসবুক মুখপাত্র সিনেটকে জানান, ‘আমরা যে নকল অ্যাকাউন্ট নিয়ে গবেষণা করি, সেটা তো নতুন কিছু নয়। আর এই অল্প একটু তথ্য পুরো গল্প বলছে না। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা নথিতে আমরা নকল অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে যে তথ্য দিই, তার কোনোটাই ওই প্রতিবেদন বদলাতে পারবে না। আমাদের বিজ্ঞাপনভিত্তিক পণ্যের ক্ষেত্রেও আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিই। দিন শেষে বিজ্ঞাপনদাতারা ফেসবুককে ব্যবহার করেন কারণ তারা ফলাফল দেখেন। আমরা তাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করি এবং রিপোর্টিং টুলের মাধ্যমে যথাযথ মান বজায় রাখি।’

‘রিয়েল আইডেন্টিটি প্লাটফর্ম’ হিসেবে নিজেদের দাবি করে ফেসবুক। আর সে কারণেই একই ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকলে ওই ব্যবহারকারীকে নিষিদ্ধ করা হয়। ফেসবুক দাবি করে, বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নয়, বরং নিজের পুরাতন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হারিয়ে যাওয়া বা তা রিকভারির জন্য প্রযুক্তি দক্ষতা না থাকার কারণেই অধিকাংশরা একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তবে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানায় টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.