এমন সাকিবকেই চেয়েছিল বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসান

বোলার সাকিবকে নিয়ে সংশয় ছিল না কখনো। কিন্তু ব্যাটার সাকিব একটু হলেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রাণখুলে হাসেনি তার ব্যাট। অবশ্য তাতে মিরপুরের স্লো ও ঘূর্ণি উইকেটেরও কিছু দোষ রয়েছে। এখানেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পা রাখে বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস যে ঠুনকো ছিল তা প্রমাণ হয় প্রথম ম্যাচেই। স্কটল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ৬ রানে হেরে যায় টাইগাররা। আত্মবিশ্বাসে টগবগে থাকা দল এক ধাক্কাতেই হয়ে পড়ে বিমর্ষ। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে উঠতে পারবে কি না তা নিয়েও জেগেছিল শঙ্কা।

এমন পরিস্থিতিতে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জ্বলে উঠা ছিল খুব জরুরি। আইপিএলে কয়েক ম্যাচ বসে থাকার পর খেললেন টানা ৫ ম্যাচ। কিন্তু সে অর্থে কিছু করতে পারেননি। হ্যাঁ কম রানআপের বোলিংয়ে বেশ আঁটসাঁট ছিলেন বটে। কিন্তু নামের পাশে ছিল না উইকেটের ফুলঝুড়ি। আর ব্যাটিংয়েও কিছু করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশা ছিল ব্যাটিংয়ের সেই জ্বালা মেটাবেন। কিন্তু ধীরলয়ে ইনিংসে উল্টো সমালোচিতই হতে হয়েছে।

সেই সাকিবই বদলে গেলেন পরের দুই ম্যাচে। ওমানের বিপক্ষে প্রবল চাপের ম্যাচে ২৯ বলে ৪২ রানের পর বল হাতে নিয়েছেন ৩ উইকেট। আর বাংলাদেশও পায় ২৬ রানের স্বস্তির এক জয়। ঠিক এমন সাকিবকেই তো চেয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে চাপ বা শঙ্কা তখনো কাটেনি পুরোপুরি। কিন্তু সাকিব থাকতে কিসের চিন্তা। এবারও সে একই দৃশ্য। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে অল্পের জন্য হয়তো হাফ সেঞ্চুরি পাননি। কিন্তু তার ৪৬ রান বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এরপর ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে একাই গুড়িয়ে দেন পিএনজিকে। শহিদ আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে হয়ে যান বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী (৩৯)।

শুধু ব্যাটিং-বোলিংয়েই নিজেকে আটকে রাখেননি সাকিব। একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে জুনিয়রদের গাইড করা, অধিনায়ককে পরামর্শ দেওয়া এসব কিছুই দেখা গেছে মাঠে। তাই তো বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলে উঠলেন, ‘আমি তো সবসময় বলি সাকিব বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার। তার মতো পারফর্মার পাওয়া বাংলাদেশ দলের সৌভাগ্য। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই সে কি দুর্দান্ত! সে একজন চ্যাম্পিয়ন।’

পিএনজির বিপক্ষে ৮৪ রানের রেকর্ড জয়ে সব শঙ্কা কাটিয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। তাদের ডিঙিয়ে সেমিফাইনালে উঠা বেশ কঠিনই। তবে টি-টোয়েন্টির এই যুগে এসে ফেভারিট বলে কিছু মানা হয় না। আর সাকিব যদি তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বজায় রাখেন তাহলে স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.