
সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দমছে না। চলমান পৌরসভা নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন দলের মনোনীত প্রার্থীদের। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে অনেকগুলো পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীকে পেছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন বিদ্রোহীরা।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের এই উত্থান ভালো হিসেবে দেখছে না আওয়ামী লীগ। যে কারণে ভবিষ্যতে দলের কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়া এবং সাংগঠনিক পদ কেড়ে নেওয়াসহ কখনোই দলের সঙ্গে যুক্ত না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, যারা নৌকার বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহ করবে এবং জনপ্রতিনিধি বিদ্রোহে উসকানি দেবে তাদের ভবিষ্যতে মনোনয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ দলীয় কোনো পদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
‘যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে এবং এখনো মাঠে আসে তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অবস্থান স্পষ্ট। বিদ্রোহীদের যারা মদদ অথবা উসকানি দিচ্ছে, তাদেরও একই শাস্তি পেতে হবে’, বলেন তিনি।
তবে দলের এমন কঠিন সিদ্ধান্তেও অটল রয়েছে বগুড়ার সোনাতলা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি, সোনাতলা পৌর আওয়ামীলীগের সদস্য, সোনাতলা বণিক ও কেন্দ্রীয় দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এবং গত বারের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহি প্রার্থী হয়ে নৌকাকে পরাজিত করে সোনাতলা পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়া মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আকন্দ নান্নু। এবার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গতবারের ন্যায় নৌকার বিরোধীতা করে ক্ষমতার মোহ ছাড়তে না পেরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন তিনি।
তবে আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রের ধারা ৪৭ এর ‘ঠ’ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে দল থেকে সরাসরি বহিষ্কার হবেন এবং যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করবেন তারাও তদন্ত সাপেক্ষে দল ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কার হবেন।’
অথচ ২০১৬ সালের সোনাতলা পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জাহাঙ্গীর আলম আকন্দ সোনাতলা পৌর মেয়র নির্বাচিত হলেও এরপর তিনি ২০২০ সালে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পদ পান। এছাড়াও জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের সহসভাপতি পদেও অধিষ্ঠ হন।
এ বিষয়ে সোনাতলা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান আমাদের বাণী’কে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ দলের বিপক্ষে কাজ করলে, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে কেন্দ্র থেকেই। যেহেতু জাহাঙ্গীর আলম আকন্দ নান্নু নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সেহেতু তাকে পৌর আওয়ামীলীগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পৌর আওয়ামীলীগের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে অচিরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে এই বিষয়ে জানানো হবে।
দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে এবং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিভাবে জাহাঙ্গীর আলম নান্নু দলের পদ পদবী পান এবং পুনরায় দলীয় সিদ্ধান্ত অনাম্য করে একই পদে বহাল থাকেন তা নিয়ে সোনাতলা উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও কিভাবে দলের পদ পান এবং পুনরায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কিভাবে দলী পদে বহাল থাকেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান আমাদের বাণী’কে বলেন, দলীয় মনোয়ন পত্রেই উল্লেখ আছে যে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয় তাহলে আপনা আপনি তার দলীয় পদ বাতিল হয়ে যাবে। সে হিসবে জাহাঙ্গীরের দলীয় পদ বাতিল হয়েছে। যেহেতু সে এখনও দলীয় পদ পদবী ব্যবহার করছেন সেক্ষেত্রে আমরা জেলা কমিটি অচিরেই তাকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার জন্য একটি লিখিত অব্যাহতি পত্র দিব। তবে বলে রাখি আমরা কাউকে বহিষ্কারের ক্ষমতা রাখি না বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারি। কেন্দ্রীয় কমিটি সেই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে তাকে বহিষ্কার করবেন।
জানতে চাইলে সোনাতলা পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও সোনাতলা পৌরসভার সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আকন্দ (নান্নু) আমাদের বাণী’কে বলেন, অন্য দল যেহেতু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না জনগণ কাকে ভোট দেবে ? পৌরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতেই আমি এবারও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বিদ্রোহী বলেন স্বতন্ত্র যাই বলেন জনগণের চাওয়া কে সম্মান করে আমার নির্বাচন থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। গতবারও দল আমাকে মনোয়নয় দেই নি। ভোট কারচুপি করেও আমাকে হারাতে পারেনি। এবারও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তবুও আমি নির্বাচন থেকে সরে আসব না। দল যদি বহিষ্কার করে করুক।
Leave a Reply