তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তার মাঝে মাঝে বসেন সরকারি হাসপাতালে

ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী
ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী। ছবিঃ সংগৃহীত

সরকারি হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করাচ্ছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী। শুধু প্রাইভেট ক্লিনিকেই দায়িত্ব পালন করে ক্ষ্যান্ত থাকেননি তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা কোন রোগীর সামান্য জটিলতা হলেই তিনি তার ব্যক্তিগত ক্লিনিকে রেফার্ড করেন।

নিয়মিত কর্মস্থলে না এলেও তার দেখা মেলে উপজেলার বেসরকারি আলীঙ্গন হাসপাতাল ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়োগনিস্টিক সেন্টারে।  এই দুই প্রাইভেট হাসপাতাল এখন তিনি প্রধান দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন যাবত তিনি দায়িত্বে অবহেলা করছেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার পরেই তার ব্যক্তিগত ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করেন। এমনও দিন গেছে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পা পর্যন্ত রাখেননি । এতে স্থানীয়রা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোন সুরাহাই পান না।

অন্যদিকে হাসপাতালের গাড়ীর ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, নিজ বাসভবনে সরকারি গাড়ী রাখা ও  সরকারিভাবে তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া চালককে অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে ব্যবহার করা এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি বড় অংকের অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।  তবে তিনি জানান, হাসপাতালে কোন গ্যারেজ না থাকায় তার বাসায় গাড়ী পার্কিং করছেন কোন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন না এবং শুধু মাত্র মানবতার খাতিরে তার সরকারি নিয়োগকৃত ব্যক্তিগত গাড়ী চালককে অ্যাম্বুলেন্সের চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।   তিনি এ জন্য সিভিল সার্জনের নিকট একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন  তবে সিভিল সার্জন এ জাতীয় কোন লিখিত আবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখে গেছে, লামা উপজেলার আলিঙ্গন হাসপাতালে তার চ্যাম্বারের সামনে রোগী দেখার সময় সংবলিত একটি সাইনবোর্ডে লেখা দুপুর থেকে রাত নয় টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয়। তবে এই সময়ের অধিকাংশ দিনই তার দায়িত্ব থাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।  এছাড়াও  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৩০ কিলিমিটার দুরুত্বে অবস্থিত চকরিয়ার ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়োগনিস্টিক সেন্টারে তিনি সরকারি গাড়ী ব্যবহার করে যান তার চেম্বারে।

এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী আমাদের বাণী’কে বলেন, আমি আমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালনের সময়ে কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখি এটা কেউ বলতে পারবে না। আর হাসপাতাল থেকে রোগী ক্লিনিকে রেফার্ড করার প্রশ্নই আসে না।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন গাড়ী রাখার গ্যারেজ না থাকায় আমি আমার বাসায় গাড়ী রাখি তবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করিনা। এ গাড়ী রাখার বিষয়ে আমি সিভিল সার্জনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।

জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ অংসুইপ্রু মারমা আমাদের বাণী’কে বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমি লামা উপজেলা হাসপাতালে পরিদর্শনে যাই, সেখানে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরীকে তার ব্যক্তিগত চালককে উনার সাথেই দেখেছি। তার বাসভবনে সরকারি গাড়ী রাখতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই পারে না। বাসভবনে গাড়ী রাখার বিষয়ে আপনাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম কোন লিখিত আমি পাইনি এটা জঘন্যতম মিথ্যাচার। দায়িত্ব পালন না করে প্রাইভেট ক্লিনিকে বসা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এসেছিল আমি মৌখিকভাবে তাকে চড়ান্তভাবে সতর্ক করেছি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.