সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন আব্দুলরাজাক গুরনাহ

সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তানজানিয়ার বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক আব্দুলরাজাক গুরনাহ। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে নোবেল কমিটি তার নাম ঘোষণা করে। সাহিত্যের এই নোবেলজয়ী পুরস্কারের অংশ হিসেবে এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস স্বর্গ (প্যারাডাইজ)। প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। উপন্যাসটি প্রকাশের পরপরই তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। এ উপন্যাসের জন্য তিনি বুকার পুরস্কারেও ভূষিত হন। নোবেল কমিটির সাহিত্য পুরস্কার বিষয়ের প্রধান আন্দ্রেজ ওলসেন বলেন, গুরনাহ হচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক।

নোবেল কমিটির বিবৃতিতে জানানো হয়, ঔপনিবেশিকতার প্রভাব এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মহাদেশগুলোর অপরিমেয় দূরত্বের মাঝে থাকা উদ্বাস্তুদের ভাগ্য অনুধাবনে নিরাপোষী এবং আন্তরিক মনোভাব ও গভীরতা অর্জনের জন্য তাকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

স্বর্গ নামে তার চতুর্থ উপন্যাসের জন্য গুনরাহ এ সম্মাননা পেলেন। এই উপন্যাসে ২০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তানজানিয়ায় এক কিশোরীর বেড়ে ওঠার গল্প বর্ণনা করা হয়েছে নিপুণভাবে।

ইংল্যান্ডে প্রবাস জীবন যাপনকালে ২১ বছর বয়সে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। সোয়াহিলি তার মাতৃভাষা। তবে ইংরেজি ভাষাই তার লেখার মাধ্যম হয়ে ওঠে।

স্বর্গ ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে আছে বিদায়ের স্মৃতি (১৯৮৭), তীর্থযাত্রীর পথ (১৯৮৮), দত্তাই (১৯৯০), নীরবতার প্রশংসায় (১৯৯৬) সমুদ্র সৈকতে (২০০১), শেষ উপহার (২০১১) ও পারলৌকিক (২০২০) । তার অন্যতম ছোটগল্পের বই- আফ্রিকার এক খামারে থাকতেন আমার মা (২০০৬)।

তানজানিয়ায় ১৯৪৮ সালে গুরনাহ জন্মগ্রহণ করেন। ভারত মহাসাগরের জানজিবার দ্বীপে তিনি বেড়ে ওঠেন। কিন্তু ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে ইংল্যান্ডে আসেন শরণার্থী হয়ে।

১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয় জানজিবার। প্রেসিডেন্ট আবেইদ কারুমের শাসনে সেখানে আরব বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্কুল শেষ করে আট বছর বয়সে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

১৯৮৪ সালে আগে তিনি জানজিবারে ফিরতে পারেননি। কেবল বাবার মৃত্যুর আগে তার একবার দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের ইংরেজি ও ঔপনিবেশিক-উত্তর সাহিত্যের অধ্যাপনা থেকে তিনি অবসর নিয়েছেন।

আব্দুলরাজাক গুরনাহ
গত বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কবি লুইস গ্লিক। তার সম্পর্কে নোবেল পুরস্কার কমিটি জানিয়েছিল, সরল ও সৌন্দর্যময় সুস্পষ্ট কাব্যিক কণ্ঠস্বরের জন্য এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে গ্লুককে। তার কাব্যিক ঢং স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে সর্বজনীন করে তোলে। কবি লুইস গ্লুকের সর্বাধিক প্রশংসিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘দ্য উইল্ড আইরিস’। টেকনিকের অভিনবত্ব, সেনসিটিভিটি তথা স্পর্শকাতরতা তার কবিতার অস্থিমজ্জায়। ১৯৯৩ সালে টনি মরিসনের পর প্রথম আমেরিকান নারী হিসেবে এই পুরস্কার জিতেন গ্লুক। কবি লুইস গ্লুক ১৯৪৩ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে উঠেছেন ক্যামব্রিজ ও ম্যাসাচুসেটসে।

এর আগে যৌন কেলেঙ্কারির জেরে ২০১৮ সালে বিরতি দিয়ে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি ২০১৯ সালে দু’বারের নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করেছিল। নোবেল ফাউন্ডেশনের আস্থা ফিরে পেতে কমিটিতে ব্যাপক রদবদলও করা হয়। ২০১৮ সালের সাহিত্যের নোবেলজয়ী হিসেবে পোল্যান্ডের ওলগা তুকারচুক এবং ২০১৯ সালের বিজয়ী হিসেবে অস্ট্রিয়ার পিটার হ্যান্ডকে-কে বেছে নেয় সুইডিশ একাডেমি।

বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। পরের দুই দিনে ঘোষণা করা হয় পদার্থবিদ্যা আর রসায়নের নোবেল। আগামীকাল শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১১ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

ডিনামাইট আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, বর্তমানে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। তার রেখে যাওয়া ওই অর্থ দিয়েই ১৯০১ সাল থেকে মর্যাদাপূর্ণ এ নোবেল পুরস্কারের প্রচলন করা হয়। এতদিন এ নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার। এবার দেয়া হবে এক কোটি ক্রোনার বা ৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.