
ঢাকাঃ গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার লইস্কা বিলে যাত্রীবাহী ট্রলারকে ধাক্কা দেয়া বালুবাহী ট্রলারের চালকসহ তিনজনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় আটক করেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়।
গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন জেলার সরাইল উপজেলার ষোলাবাড়ি এলাকার ট্রলারচালক জামির মিয়া এবং তার দুই সহযোগী মো. খোকন ও মো. রাসেল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা জানান, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় বালুবাহী ট্রলারটির চালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
এর আগে লইস্কা বিলে শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ট্রলারটির ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় রাত ১১টা পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এখন নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ৪০ জন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১৩ জনকে। আহত ১৬ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুমূর্ষু পাঁচজন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাত ১১টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৭ জনের দেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহের সঙ্গে দাফনের জন্য স্বজনদের দেয়া হয়ে ২০ হাজার টাকার অর্থ সহায়তা।
দুর্ঘটনার পর সাঁতরে তীরে ওঠেন সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আঁখি আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে আনন্দবাজার ঘাটে পৌঁছাতে ট্রলারে উঠি। সঙ্গে ছিল স্বামী মুরাদ মিয়া, দুই ছেলে, শাশুড়ি ও ভাশুরের তিন ছেলে।সব মিলে ট্রলারে শতাধিক যাত্রী ছিল। ট্রলারটি লইস্কা বিলে বালুবোঝাই একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তলিয়ে যায়। স্বামী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সাঁতরে তীরে আসি। কিন্তু আরেক ছেলে, শাশুড়ি ও ভাশুরের তিন ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না।’
হাসপাতালে ভর্তি মুরাদ মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। তারপর অনেক কষ্টে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাঁতরে ওপরে উঠেছি। আমার এক ছেলে, মা ও তিন ভাতিজা এখনও নিখোঁজ রয়েছে।’
লইস্কা বিল এলাকায় নিখোঁজ ভাইয়ের জন্য আহাজারি করছিলেন এনামুল ইসলাম মান্না মিয়া। তিনি জানান, তার ভাই সিরাজুল ইসলাম মনিপুর ঘাট থেকে ট্রলারে ওঠেন আনন্দবাজারে যাওয়ার জন্য। তার ভাই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
দুর্ঘটনার ৭ ঘণ্টা পার হলেও এনামুলের মতো অনেকে তাদের স্বজনদের খুঁজে পাননি। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও বিল এলাকা।
নিখোঁজদের সন্ধানে তৎপর রয়েছেন এলাকাবাসী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ট্রলারডুবির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা উদ্ধারকাজ শুরু করি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডুবুরি দল না থাকায় কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে ডুবুরি দল আসার পর মূল অভিযান শুরু হবে।’
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/২৮/০৮/২০২১
Leave a Reply