ভারতে পাচার হওয়া নারীদের ফেরাতে পুলিশের প্রস্তুতি

ঢাকাঃ ঢাকার হাতিরঝিল এলাকা থেকে গত কয়েক মাসে অন্তত ১০ তরুণী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা পাচার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করলেও মানসম্মানের ভয়ে থানা-পুলিশকে কিছু জানায়নি তাঁদের পরিবার।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ভাষ্য, নিখোঁজ তরুণীরা ভারতে পাচার হয়েছেন। কয়েকটি প্রদেশে তাঁদের জিম্মি করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে তাঁদের উদ্ধারের পাশাপাশি ভারতে গ্রেপ্তার পাচার চক্রের সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চায় তারা।

ভারতে যাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) কাছে আবেদন করেছে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

গত মে মাসে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নারী পাচারের ভয়ংকর সব তথ্য উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় পাচারকারী চক্রের কবল থেকে এ পর্যন্ত চারজন তরুণী পালিয়ে দেশে ফিরেছেন। একই চক্রের হাতে পাচারের শিকার হয়েছেন নিখোঁজ অন্তত ১০ তরুণী। তাঁদের মধ্যে ৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের নামোল্লেখ করে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। পাচারের শিকার এসব তরুণীর পরিবার হাতিরঝিল থানা এলাকায় বসবাস করে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, টিকটক হৃদয় বাবু ও তাঁর নারী পাচার চক্রের মাধ্যমে এই তরুণীদের পাচার করা হয়েছে। তাঁরা কোথায় কীভাবে আছেন, পরিবার সে সম্পর্কে কিছুই জানে না। তবে পুলিশ বলছে, তাঁরা ভারতে জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। পালিয়ে আসা চার তরুণী তাঁদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। সেখানে তাঁদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশি পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের বেঙ্গালুরুর রামমূর্তিনগর থানা-পুলিশ এক ভারতীয়সহ টিকটক হৃদয় বাবু চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এঁদের মধ্যে তিন নারীও রয়েছেন।

পুলিশ বলছে, এসব তরুণীকে এখন ভারতের তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু, তেলিঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদে আবাসিক হোটেল, মেসেজ পারলার ও স্পা সেন্টারে জিম্মি করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর এআইজি মহিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে আনতে আমরা ইতিমধ্যে নয়াদিল্লির এনসিবিকে চিঠি দিয়েছি। প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও কোনো সাড়া মেলেনি। আমরা তাদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক বলেন, নারী পাচারের ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত চক্রের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১১ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চক্রের আরও সাত সদস্যের নাম-ঠিকানা ও অবস্থান জানা গেছে।

তেজগাঁও বিভাগ নারী পাচারের একাধিক মামলা তদন্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরকে একটি প্রতিবেদনে দিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর) সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে নারীদের পাচার করা হচ্ছে।

চক্রটি ভারত ছাড়াও দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এই পথে বিদেশে নারী পাচার করছে। তাদের টার্গেট স্কুল-কলেজপড়ুয়া তরুণীসহ গৃহিণীরা।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/২৪/০৮/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.