
বগুড়াঃ প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করা; জেলা-উপজেলায় সকল হাসপাতালে বেড সংখ্যা, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানুলা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ানসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা; করোনাকালে সকল শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য ও নগদ অর্থসহায়তা দেওয়াসহ ৫ দফা দাবিতে বগুড়ায় সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটচ।
আজ মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসাবে জেলার সাত মাথায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে
সভাপতিত্ব করবেন বাম গণতান্ত্রিক জোট বগুড়া জেলার সমন্বয়ক, বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক অ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু, সঞ্চালনা করেন সিপিবি নেতা শাহনিয়াজ খান পাপ্পু। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, বাসদ জেলা সদস্য সচিব সাইফুজ্জামান টুটুল, বাসদ জেলা সদস্য দিলরুবা নূরী, সিপিবি সদর উপজেলা সভাপতি সন্তোষ কুমার পাল।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, “করোনা কেউ একা বা একদেশের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব না, তা গত দেড় বছরে গোটা বিশ্ব বুঝলেও আমাদের দেশের ভোটডাকাতির অবৈধ সরকার যৌথভাবে সমন্বিত উদ্যোগে সকলকে যুক্ত করে করোনা মোকাবিলার পথে না গিয়ে সবকিছুর মতোই করোনা সংকটেও দলীয়করণ ও দলীয় সংকীর্ণতায় এককভাবে চলতে গিয়ে পরিস্থিতি লেজে গোবরে করে ফেলেছে। যার নিকৃষ্টতম শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। বাম জোট ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই সর্বদলীয় সভা করে করোনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। আরও দাবি করা হয়েছিল দৈনিক কমপক্ষে ১ লক্ষ করোনা টেস্ট বিনামূল্যে করা, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করে বিনামূল্যে সকলের করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসা করা, পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ, পর্যাপ্ত হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা। কিন্তু টাকা বরাদ্দ থাকলেও দেড় বছরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এটা শুধু সরকারের অদক্ষতা ও চরম ব্যর্থতাই নয়, জনগণের প্রতি দায়িত্বহীনতা এবং গুরুতর অপরাধ”।
কমরেড আমিনুল ফরিদ বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। সংক্রমণ বেড়ে গেলে লকডাউন, কারফিউ দিতেও দেখা গেছে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে। আমাদের দেশে সাধারণ ছুটি, লকডাউন ইত্যাদি ঘোষণা করলেও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের খাবার ও নগদ অর্থ ব্যবস্থা না করে ঘরে থাকতে বললে যে তা কার্যকর হবেনা এটা বাম জোট ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হলেও সরকার সে পথে হাটে নি, ফলে যা হবার তাই হয়েছে। লকডাউন সফল হয়নি। তাছাড়া একদিকে লকডাউনের ঘোষণা অন্য দিকে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা এমন দ্বিচারিতায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের সংক্রমণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অথচ আগেই ভারতের পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখনই সতর্ক হওয়ার সুযোগ পেয়েও সরকার তা গ্রহণ না করে জনগণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে’।
অন্যান্য নেতৃত্ব বলেন, টিকা নিয়েও নানা তুঘলকি কা- করছে। শুরুতেই সরকার শুধুমাত্র ভারতের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। চীনকে সিনোভ্যাকের ৩য় ধাপের ট্রায়ালের অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু এখন সিনোভ্যাক থেকেই ৭ কোটি ডোজ টিকা কেনার কথা বলা হচ্ছে। যদি ঐ সময় সিনোভ্যাকের ট্রায়াল হতো এবং যৌথভাবে উৎপাদনে যেতো তাহলে এতো দিনে প্রায় সকলের টিকা নিশ্চিত করা যেতো। এখন আবার টিকা প্রদানেও নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, জনবল নিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে এবং দলীয়করণের ফলে গণটিকা গণহয়রানীতে পরিণত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে দৈনিক কমপক্ষে ২ লক্ষ করোনা টেস্ট করা, গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করা, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করা; জেলা-উপজেলায় সকল হাসপাতালে বেড সংখ্যা, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানুলা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ানসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা; করোনাকালে সকল শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য ও নগদ অর্থসহায়তা, রেশন ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদান; সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে করোনা টিকা দিয়ে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া; এবং করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করার দাবি জানান।।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/১৭/০৮/২০২১
Leave a Reply