প্রশাসনের নাকের ডগায় রাস্তা দখল করে চাঁদাবাজি

ঢাকাঃ রাজধানীর খিলগাঁ ও সবুজবাগ এলাকার ফুটপাত যেন চাঁদারহাট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একদিনেই খিলগাঁও সবুজবাগ ফুটপাতের প্রায় তিন হাজার দোকান থেকে উঠছে প্রায় সাত লাখ টাকার চাঁদা। স্থানীয়দের দাবি, তিন জন লাইনম্যানের মাধ্যমে তোলা এই চাঁদার টাকা যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের পকেটে।

অবৈধ এ টাকার জোরেই কখনোই পুরোপুরি হকারমুক্ত হয় না খিলগাঁও সবুজবাগ ফুটপাত। খিলগাঁও সবুজবাগ এলাকার অনেক স্থানেই সংকুচিত মানুষের চলার পথ। দিন দিন বাড়ছে যানজট, কোথাও কোথাও রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ফুটপাত দখল করায় বিড়ম্বনায় পড়ছে পথচারী ও স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১৩ই আগস্ট) খিলগাঁও এলাকার পেয়ারা ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, এই করোনা পরিস্থিতির কারণে ফুটপাতের ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হলেও ফুটপাতের দোকানের চাঁদার টাকা কমেনি বরং বেড়েছে। আর সময়মতো চাঁদার টাকা না দিতে পারলে দোকান তুলে দেওয়া হয়। করোনার কারণে কোনো বেচাকেনা নেই।

তিনি বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করলে পুঁজি লাগেনা অল্প পুজিতেই ব্যবসা করা যায়, প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা বেচাকেনা হয় এরমধ্যে লাভ থাকে প্রায় ৫০০ টাকা। তবে প্রতিদিন ও সাপ্তাহিক চাঁদা দেওয়ার ফলে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু এই চাদা না দিলে ফুটপাতে কারো ব্যবসা করার ক্ষমতা নেই। আর এই ব্যবসা করতে না পারলে পরিবারের সবাইকে উপোস থাকতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করি।

তিনি আরও বলেন, শুধু আমার জন্য নয়। যারা খিলগাঁও সবুজবাগ এলাকায় ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের সবাইকে চাঁদা দিতে হয়।

কারা চাঁদা নেন জানতে চাইলে ব্যবসায়ী বলেন, লাইনম্যানরাই হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে।কথিত আছে এর অংশ রাজনৈতিক দল থকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনকেও দিতে হয়।

সবুজবাগ এলাকার লাইনম্যানদের দাবি, ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে প্রশাসনকে প্রতিদিন টাকা দিতে হবে। আর টাকা না দিতে পারলে ফুটপাতে ব্যবসা করা যাবে না।

অন্যদিকে খিলগাঁও এলাকার ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনার আগে বেসরকারি এক কম্পানিতে চাকরি করেছিলাম। এই করোনা পরিস্থিতির কারনে আমার চাকরিটা চলে যাওয়ার পর কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফুটপাতে ফলের ব্যবসা শুরু করি।

ফুটপাত দোকানের চাঁদার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার দোকানটা একটু বড় তার জন্য চাঁদার টাকা বেশি দিতে হয়। আর যারা সবজি বিক্রি করে তাদের চাঁদার হার কিছুটা কম। বেচাকেনা হোক আর না হোক, সব মিলিয়ে এখানকার একজন ব্যবসায়ীকে দিনে অন্তত দুইশত টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক হকারকেই চাঁদা দিতে হবে। প্রতিদিন চাদার টাকা না দিলে এখানে দোকান রাখা অসম্ভব।

এ বিষয়ে সবুজবাগ থানার ওসি মুরাদ বলেন, চাঁদার টাকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কে বা কাহারা চাঁদার টাকা তুলেন এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

অন্যদিকে, সবুজবাগ থানার কর্তব্যরত অফিসার প্রনয় বলেন, রাজধানীর ফুটপাতের দোকানপাট আমরা সবসময় উঠিয়ে দেই। তবে হকাররা আবার বসে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে চাঁদাবাজির সঙ্গে কারোর জড়িত থাকার অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খিলগাঁও থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা কাইয়ুম বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। তবে খিলগাঁও থানার কোনো পুলিশ ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলার সাথে জরিত নয়।

এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গারীর আলমের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বসবাসকারীরা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় চলছে এই চাদাঁবাজি, তারা যদি সহযোগীতা না করতো তাহলে অবৈধভাবে কখনই রাস্তা দখল হতো না। রাস্তা দখল হয়ে যাওয়ার কারনে চলাচলে সমস্যায় পরতে হয় সব সময়। শুধু ফুটপাত নয়, বাসার গেটের সামনেও অনেকে হকার রাস্তা দখল করে রাখে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এর প্রতিকার চাই। সেই সাথে হকার মুক্ত ফুটপাত চাই। তাই প্রশাসনসহ সিটি কর্পোরেশন এবং এর সাথে জরিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/১৫/০৮/২০২১

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.