
গাজীপুরঃ গাজীপুরের বহুল আলোচিত সমালোচিত চিহ্নিত মাদক কারবারী ও ভুমি দখলকারী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনার ও তাঁর ৫ম স্ত্রী ইসমিতা জাহান পপি সম্প্রতি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নাম সর্বস্ব কয়েকটি গণমাধ্যমে জেলার বহুল পরিচিত ও সুনামধন্য ব্যবসায়ী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ঠিকাদার লাভলী বেগমকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে তাঁর সম্মানহানী ও ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে লাভলী বেগম তাকে নিয়ে প্রকাশিত নিউজের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে প্রেরণ করলে প্রতিবাদলিপি ছাপিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমগুলোর যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী দিয়ে লাভলী বেগমের কোনরূপ ক্ষতিসাধন করতে না পারলে গত ২২ মে ২০২১ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দপ্তরসহ গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর ‘আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন, মাদক ব্যবসা, নিজ বাড়িতে বিট পুলিশিং বসিয়ে মাদক ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে জমি দখল, হয়রানী, ব্লাক মেলিং করে অর্থ উপার্জন করায় প্রয়োজনী আইনগত ব্যবস্থা নেবার আবেদন জানিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের লক্ষীপুরা গ্রামের কিছু ভাড়াটিয়ার এনজিওর জন্য স্বাক্ষর লাগবে বলে স্বাক্ষর নিয়ে এবং এক নম্বর মতি কমিশনার এর ৫ম স্ত্রী ইসমিতা জাহান পপি ও ২ নম্বরে মতি কমিশনারসহ তাঁর ছেলের স্বাক্ষর নিয়ে আবেদন করে।
উক্ত আবেদনের সরকারের উচ্চ মহল থেকে তদন্তের দায়িত্ব আসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে। গাজীপুর পুলিশ কমিশনার কার্যালয় তার দায়িত্ব দেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যার তদন্ত চলছে।
গাজীপুর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, লাভলী বেগমের বিরুদ্ধে যে সকল বিষয় নিয়ে অভিযোগ করে আবেদন করা হয়েছে তা তদন্ত চলছে। তবে মাদক ব্যবসা ও দখল প্রসঙ্গে কোন ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এর আগে কখনও শোনা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দপ্তরে লাভলী বেগমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগের আবেদন পত্রে মতি-পপি দম্পতির পরিবারের সদস্যদের বাদে সেসকল স্বাক্ষর আছে তাদের সাথে আমাদের বাণী’ যোগাযোগ করেছে। তবে স্বাক্ষরকৃত বেশ কিছু নামের বাস্তবে হদিস পাওয়া যায়নি এবং বেশ কিছু মোবাইল নম্বর যা অন্য জেলায় ব্যবহৃত লাভলী বেগমকে তাঁরা চেনেন না এমনকি লক্ষ্মীপুরায় তাঁরা কখনও বসবাসও করেন নাই। তবে যাদের সাথে আমাদের বাণী টিম কথা বলেছে, তাঁরা অধিকাংশই লক্ষ্মীপুরার ভাড়াটিয়া এবং মতি-পপি দম্পতি তাদের কাছে এনজিওর সই বাসার ভাড়াটিয়া হালনাগাদ পেপারের স্বাক্ষর লাগবে বলে স্বাক্ষর নিয়েছেন। বাস্তবে তাঁরা জানানই না এই স্বাক্ষর লাভলী বেগম নামের ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলে ব্যবহৃত হবে।
উল্লেখ্য যে, মতি-পপি দম্পতি লাভলী বেগমের লক্ষ্মীপুরার নিজ বাসভবনের সীমানা প্রাচীর দীর্ঘদিন ধরে দখলে ছিলেন। এই সীমানা প্রাচীর দখল কে কেন্দ্র করে (যা পরবর্তীতে সরকারি সনদপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার এর মাধ্যমে জমি পরিমাপ করে লাভলী বেগম তাঁর সীমানা প্রারীর বুঝে পান) এবং এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে মতি-পপি দম্পতি ও তাদের ছত্র ছায়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে সহযোগিতা করায় লাভলী বেগমের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ করে মতি-পপি দম্পতি। লাভলী বেগম এর বাসা্র একটি ফ্লাট বিট পুলিশিং কার্যালয় হিসেবে ভাড়া দিলে পুলিশের ছত্র ছায়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ আনে। তবে জেলা পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও সদর থানার পুলিশ সূত্র বলছে এই এলাকার বিট পুলিশিং মাদক ব্যবসার বিস্তারকে রোধের জন্যই মুলত স্থাপিত হয়েছে। সেই পুলিশের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ বড়ই হাস্যকর।
মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে অন্যের জমি দখল, সরকারি খাস জমি দখলসহ এহেন কোন অভিযোগ নাই যা মতি কমিশনার ও তাঁর স্ত্রী পপির বিরুদ্ধে নেই। চলতি মাসের গত শুক্রবার গাজীপুরের পুবাইলের মোয়াজ্জেম হোসেন রনি নামের এক ব্যক্তির সাথে জমি প্রতারণামূলক মামলায় বর্তমানে জেলে আছে মতি কমিশনার। এছাড়াও গাজীপুর সিটির ২৭ নং ওয়ার্ডে সরকারি ১০ শতাংশ জমিতে পপি সুপার মার্কেট ও রিক্সা গ্যারেজ নির্মাণ করে দখল করে তা ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করছে এই দম্পতি যার বিরুদ্ধে কেস ফাউল করেছে গাজীপুর সদর থানার সহকারী কমিশনার ভূমি) তানিয়া জান্নাত। বিষয়টি তিনি আমাদের বাণীকে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও মতি-পপি দম্পতির অত্যাচার থেকে বাঁচতে ফাতেমা বেগম নামের এক অসহায় বিধবা নারী সম্প্রতি গাজীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এই বিধবা নারীর বসত ভিটা দখলের চেষ্টা করছে এই দম্পতি। মতি কমিশনারের আপন বড় ভাই ইমাম আলীর অর্থ আত্মসাৎ, তার আপন খালাতো ভাই গাজীপুরের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ সিরাজের জমি দখল করে ভোগ করার অভিযোগও রয়েছে মতি কমিশনারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মতি-পপি দম্পতি মাদক বাণিজ্যে অবৈধ অস্ত্র ও লাইসেন্স বিহীন ওয়াকিটকিও ব্যবহারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এছাড়াও এই দম্পতি তাদের বাড়ীতে মাদক পার্টি, ব্যবসা ও অশ্লীল ডিজে পার্টির কয়েকটি ভিডিওসহ সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
লাভলী বেগম তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে আমাদের বাণী’কে বলেন, তদন্তে আমাকে গাজীপুর সদর থানা পুলিশ ডেকেছিল আমার কাছে আমার সম্পদের হিসেব আমার কি কি আছে কি নেই তার সব ডকুমেন্ট আমি তাদেরকে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে আমার সম্মানহানী ও ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করা হয়েছে এর বিরুদ্ধে আমি অচিরেই আদালতে মানহানী মামলা করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশনের এক পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি যতদুর জানি তদন্তের ফাইনাল রিপোর্ট এখনও পাঠানো হয়নি। তাই এই বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাচ্ছি না তবে এতটু বলতে পারি পুলিশকে জড়িয়ে লাভলী বেগমকে নিয়ে যে আবেদন করা হয়েছে তার কোন সত্যতা মেলেনি।
আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/১১/০৮/২০২১
Leave a Reply