টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীকে পেটালেন চেয়ারম্যান

চেয়ারম্যান মো. শাহীন হাওলাদার
চেয়ারম্যান মো. শাহীন হাওলাদার

সালিশ বৈঠকে কিশোরীকে বিয়ে করে আলোচিত সেই চেয়ারম্যান মো. শাহীন হাওলাদার তার মনমতো টিকা না দেয়ায় পিটিয়ে অজ্ঞান করেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীকে। গতকাল শনিবার পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যান শাহিন তার ইচ্ছানুযায়ী করোনার টিকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি আর লাথি মারতে থাকেন। এ সময় স্বাস্থ্যকর্মী আল আমিন সিকদার অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

এক পর্যায়ে ইউনিয়ন সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক তাসলিমা নাজনিন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) প্রশান্ত কুমার সাহাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান শাহিন।

আহত আল-আমিন ওই ইউনিয়নের ঝিলনা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক সিকদারের ছেলে। একই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারী হিসাবে কর্মরত তিনি।

আল আমিন সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে আমরা কনকদিয়া ইউনিয়নে ৬০০ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার কথা। এজন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু তিনি (চেয়ারম্যান) বেলা ১১টার সময় এসে আমাদের বলেন যারা ভ্যাকসিন নিতে আসছে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি রেখে ভ্যাকসিন দিয়ে দেন।’

‘আমি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রশনের কথা বললে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে দুই হাত দিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি এবং পা দিয়ে লাথি মারেন। আমি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যাই। এক পর্যায়ে আমার সহকর্মীদের সেবায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি। এরপর শুনি তাসলিমা আপা (ইউনিয়ন সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক) ও ইউএইচও স্যারকে গালাগালি করেছেন তিনি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘আমার স্বাস্থ্যকর্মী আল আমিন সিকদার ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষ করে আমাকে রাতে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারি বিধি অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেব।’

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম শিপন বলেন, সেই আলোচিত চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দায়িত্বরত অবস্থায় মারধর করেছে। তিনি এটি কোনভাবেই পারেন না। তার শাস্তি হওয়া উচিত। আমি ইতিমধ্যে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি। স্বাস্থ্যকর্মী আল আমিন বাউফল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, ‘নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। যারা আইডি কার্ড নিয়ে আসবে তারা টিকা পাবে। অথচ এখানে টিকা দিতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে টিকা দিচ্ছে। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করেছি। কাউকে মারধর কিংবা গালাগালি করার অভিযোগ সত্য না।’

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন সালিশ বৈঠকে এক কিশোরীকে জোরপূর্বক বিয়ে করে ব্যাপক আলোচিত হন চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার। এর আগে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে মারধর করে ব্যাপক সমালোচিতও হন তিনি। তিনি ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। পরপর দুইবার নৌকা প্রতীক নিয়ে কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.