জন্মের পরই বদলাচ্ছে আসামদের পরিচয়

সরকারি দপ্তরগুলোতে ১২টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাসের কথা বলা হলেও নেই আসামদের নাম। এদের জনসংখ্যা নিয়েও নেই সরকারি কোন জরিপ। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সুবিধা পেতে শিশুদের পরিচয় বদলে নামের শেষে মারমা, চাকমা লাগিয়ে দিচ্ছেন আসামরা। এতে প্রতি বছর কমে আসাম জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা।

রাঙামাটি শহরে আসামবস্তি নামে আসামদের একটি গ্রাম আছে। এখানে তাঁদের জনসংখ্যা ৩ শ’র কাছাকাছি। কিন্তু, এই গ্রামে তারাই সংখ্যালঘু। হিন্দু, মুসলিম, চাকমা, মারমাদের ভিড়ে আসামদের অস্তিত্ব একেবারে নগণ্য বলা যায়। আসামবস্তিতে ৫০ পরিবার আসাম ছাড়াও গর্জনতলী, কাপ্তাইয়ের রাইখালী, বান্দরবান জেলা সদরের মধ্যম পাড়ায় ৭-১০ পরিবার, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গঞ্জপাড়ায় আছে ৭ পরিবার।

তবে সরকারি দপ্তরে নাম না থাকায় আসামরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটাসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের কোন জনপ্রতিনিধিও নেই। নেই সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, চিকিৎসক বা প্রকৌশলী। মাত্র ৩ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের নাম বলতে পেরেছেন আসামরা। এদের মধ্যে দুজন খাগড়াছড়ি জেলায়। একজন রাঙামাটি শহরের আসামবস্তি থেকে। এ ছাড়া তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণি সরকারি চাকরি করে আরও ৩ জন।

বর্তমানে এ জনগোষ্ঠী থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করা লোক আছ ৪ জন। ৮-১০ জন স্নাতকোত্তর পড়ছেন। আসামের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ আসামবস্তির বাসিন্দা কুসুম আসাম (৮৫) বলেন, আমাদের বাবা দাদুরা জঙ্গল পরিষ্কার করে এ গ্রাম গড়ে তোলে। আমার যতটুকু মনে পড়ে আমাদের সময়ে এখানে আসাম ছাড়া অন্যদের বসবাস ছিল না। ধীরে ধীরে আমরা আমাদের গ্রামে সংখ্যালুঘুতে পরিণত হয়েছি। আমাদের আসামরা নিজেদের কেউ মারমা, কেউ চাকমা, কেউ ত্রিপুরা লিখছে। অনেককে আমি চিনি। যারা অরিজিনাল আসাম কিন্তু লিখছে মারমা।

আসামবস্তির বাসিন্দা সুনীল আসাম (৪০) বলেন, আমরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা বৈষম্যর শিকারও। জেলা পরিষদের অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে একেক জন প্রতিনিধি আছে। কিন্তু আমাদের নেই। আমাদের কথা বলার মত মানুষ নেই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটার সুবিধা নিতে গিয়ে অনেকে ত্রিপুরা হয়েছেন। অনেকে চাকমা, অনেকে মারমা হয়েছেন। ফলে সময় চলে গেলেও আসামদের সংখ্যা বাড়েনি। বিপরীতে কমেছে।

আসাম ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৭১ সালে ব্রিটিশ শাসক লুসাই বিদ্রোহ দমন করতে ব্রিটিশ ভারত ও নেপাল থেকে সেকেন্ড গুর্খা রেজিমেন্টের অধীনে কিছু আসাম সৈন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এ আসামদের মধ্যে অধিকাংশ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে। কিছু অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে যায়।

রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক রনেল চাকমা বলেন, রাঙামাটিতে আসামের বসবাস রয়েছে এটা ঠিক। সংখ্যায় কম নয় তারা। কিন্তু সরকার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সর্বশেষ যে তালিকা করেছে সেখানে আসামদের কথা বলা নেই। ফলে আমরা চাইলে তাদের সহযোগিতা করতে পারি না। তারা আসলে সব দিক দিয়ে বঞ্চিত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.