ডেঙ্গু: ছয় দিনে ১৫০০ রোগী

ডেঙ্গু

দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরো ২১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ রোগীই ঢাকার। এ নিয়ে চলতি আগস্ট মাসের ছয়দিনেই এক হাজার ৪৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই শ জন করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ১০ জন রোগী ভর্তি আছে। এরমধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৯৭২ জন আর বাকি ৩৮ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। গত জুলাই মাসে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ১১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৫ জন।

গতবছরের জুন ও জুলাই মাসের তুলনায় ২০২১ সালের দুই মাসে মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৬০ গুণ! আবার শুধু আগস্টের হিসাব ধরলে সেটা ছাড়িয়ে যায় ৭০ গুণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছরের জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। আর এবারের আগস্টেই গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই শ জন করে। চলতি বছরের জুনে ২৭২, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন এবং আগস্টের প্রথম ছয় দিনেই এক হাজার ৪৫৭ জন আক্রান্ত হন।

চলতি বছর জুন থেকে আগস্টের প্রথম ছয়দিন পর্যন্ত মোট ৬৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ১৫৩ জন। গত বছরের আগস্টের প্রথম চারদিন আক্রান্ত ছিল ৫১ জন। সেই হিসাবে চলতি বছরের এই সময়ে রোগী বেড়েছে ৭০ গুণ।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমরা ডেঙ্গুর যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি সেটা পুরোপুরি নয়। রোগী আরো বেশি। সব হাসপাতাল কিন্তু তথ্য দেয় না। করোনার ক্ষেত্রে যারা শুধু টেস্ট করে তাদের হিসাবটা আসে। ডেঙ্গুতেও তাই ঘটছে।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের জুনের শুরু থেকেই বলে আসছি ডেঙ্গু বাড়বে। কেউ কান দেয়নি। আমরা পূর্বাভাস দিলে ব্যবস্থা নেয় না। উত্তরের মেয়র মাঠে কিছুটা সরব ছিলেন। তারা কিছু কাজ করেছেন। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট ছিল না।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সিটি করপোরেশনের সমস্যা হলো পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলেই তারা কোমর বেঁধে নামে। এখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সিটি করপোরেশনের অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কমিটি করতে হবে। প্রতিটি কমিটিতে একজন লার্ভিসাইডিং স্প্রেম্যান ও একজন অ্যাডাল্টিসাইডিং স্প্রেম্যান দিতে হবে। এদের সঙ্গে একজন ক্লিনার রাখতে হবে। নেতৃত্ব দেবেন জনপ্রতিনিধিরা। একযোগে কাজটি করতে হবে।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন উড়ন্ত মশা মারা। বেশি বেশি ফগিং করতে হবে। লার্ভা পরে মারতে হবে। কারণ উড়ন্ত মশাগুলো তো আক্রান্ত করছে। যেসব এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে সেসব এলাকায় ওষুধ ছিটাতে হবে আগে।

তিনি আরো বলেন, অভিযানগুলোতে লক্ষ্য করছি ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে জরিমানা করছে। কিন্তু লার্ভাগুলো ধ্বংস করে আসছে না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.